রক্তে গাড়ির আসন ভিজবে বলে...

গাড়ি রক্তে ভিজে যাবে বলে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুই কিশোরকে সড়ক থেকে তুলল না পুলিশ। আশপাশের লোকজনের আবেদনেও টহলরত পুলিশ সাড়া দেয়নি। এমনকি দুর্ঘটনাস্থলের সামনে চলাচলকারী কোনো গাড়ি সাহায্য করতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত সড়কেই প্রাণ গেল দুই কিশোরের। গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে ঘটেছে এ ঘটনা।
ঘটনাস্থলে থাকা এক ব্যক্তি পুরো ঘটনা ভিডিও করেন। পরে এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, রাজ্যজুড়ে যেকোনো ঘটনায় পুলিশের তড়িৎ ভূমিকা রাখার উদ্দেশ্যে উত্তর প্রদেশ সরকারের ‘ডায়াল ১০০’ প্রকল্প রয়েছে। পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এই প্রকল্পে সরকার ২০১৬ সালে আরও গাড়িও দিয়েছে। অথচ ওই দুই কিশোরের দুর্ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলেও কোনো সাহায্য করেনি। মোটরসাইকেল আরোহী নিহত দুই কিশোরের পরিচয় জানা গেছে। তারা হচ্ছেন অর্পিত খুরানা ও সানি। তাদের দুজনেরই বয়স ১৭।


তিন মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, রক্তাক্ত দুই কিশোর সড়কে পড়ে রয়েছে। কাছেই তাদের মোটরসাইকেলটি পড়ে রয়েছে। কয়েকজন লোক তাদের তোলার চেষ্টা করছেন। ‘ডায়াল ১০০’ প্রকল্পের আওতায় টহলরত তিনজন পুলিশ সদস্য গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছেন। তবে ওই দুই কিশোরকে সড়ক থেকে তোলেননি। ওই তিন পুলিশ সদস্য চাননি তাঁদের গাড়ি রক্তে ভিজে যাক।

‘ওরা তো কারও না কারও সন্তান’—পুলিশের প্রতি আকুতি জানাতে শোনা গেল এক লোককে। ‘এখানে কারও গাড়ি নেই। ওদের তুলুন।’—ওই ব্যক্তি বারবার আকুতি জানিয়ে যাচ্ছিলেন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতেই লোকজন সেখানে চলাচলকারী কয়েকটি গাড়িকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো গাড়িই সাহায্যের জন্য থামেনি।

ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, আরেকজন লোক পুলিশকে বলছেন, ‘আপনাদের গাড়ি তো ধোয়াও যাবে কিন্তু...’। এরপরও পুলিশের কোনো ভাবান্তর দেখা যায়নি। তিন পুলিশ সদস্যের একজন ওই সময় বলে উঠলেন, ‘গাড়ি ধোয়া হলে সারা রাত আমরা বসব কোথায়।’

একসময় স্থানীয় পুলিশ স্টেশন থেকে আরেকটি গাড়ি আসে। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর দুই কিশোরকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে সাহারানপুর পুলিশপ্রধান প্রবাল প্রতাপ সিংহ বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়া ওই তিন পুলিশ সদস্যের কাণ্ড সম্পর্কে শুনেছি। তাঁরা হাসপাতালে নিতে সহায়তা করতে চাননি বলে অভিযোগ উঠছে। ভিডিওটি দেখে বোঝা যাচ্ছে যে অভিযোগ সত্য। তিনি জানান, ওই তিন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।