নতুন বিতর্কে ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্টের আনুষ্ঠানিক টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে মেয়ে ইভানকা ট্রাম্পের ব্যবসার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এতেই পড়েছেন তীব্র সমালোচনার মুখে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ে ট্রাম্পকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তিনি প্রেসিডেন্টের টুইটার ব্যবহার করে ব্যবসা নিয়ে মন্তব্য করে আইন লঙ্ঘন করেছেন বলেই অনেকের মত।

সম্প্রতি মার্কিন চেইন শপ নর্ডস্ট্রম প্রেসিডেন্টের কন্যা ইভানকার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের এমন সিদ্ধান্তের পর বুধবার ট্রাম্প প্রথমে নিজের ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে নর্ডস্ট্রমের সমালোচনা করেন। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত টুইটার অ্যাকাউন্ট (পোটাস) ব্যবহার করেন ট্রাম্প। টুইট বার্তায় তিনি দাবি করেন, নর্ডস্ট্রম তাঁর মেয়ে ইভানকার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছে। তিনি লেখেন, ‘আমার মেয়ে ইভানকার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। সে দারুণ মানুষ। সব সময় আমাকে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করে। ভয়াবহ।’

হোয়াইট হাউসের অবস্থান থেকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে মন্তব্য করার বিষয়টির তীব্র সমালোচনা করছেন অনেকে। ডেমোক্র্যাট সিনেটররা এমন কাজকে খুবই ‘অনুপযুক্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন।

চেইন শপ নর্ডস্ট্রমও চুপ থাকেনি। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, ইভানকার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিক্রিতে ভাটা পড়ায় তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছর থেকেই, বিশেষ করে বছরের শেষার্ধে ইভানকার প্রতিষ্ঠানের পণ্যের চাহিদা কমে যায়। ফলে বাধ্য হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে ইভানকাকেও বিষয়টি অবহিত করেছে নর্ডস্ট্রম কর্তৃপক্ষ।

সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত আইনি কর্মকর্তা রিচার্ড পেইন্টার এক ই-মেইল বার্তায় রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি স্পষ্টতই ব্যক্তিস্বার্থে সরকারি অফিসকে অন্যায়ভাবে ব্যবহারের মধ্যে পড়ে। এটি নিশ্চয়ই ক্ষমতার অপব্যবহার। বার্তা স্পষ্ট, এই প্রশাসনের অধীনে নর্ডস্ট্রম অবাঞ্ছিত থাকবে।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নৈতিকতা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা নর্ম্যান ইসন বলেন, এ ধরনের মন্তব্যের কারণে নর্ডস্ট্রমের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে তারা চাইলে মামলাও করতে পারে।

ডেমোক্র্যাট সিনেটর ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ‘আমি মনে করি এটা অন্যায়। তিনি (ট্রাম্প) পুরোপুরি অনুপযোগী প্রেসিডেন্ট।’

পেনসিলভানিয়ার সিনেটর বব কেসির মুখপাত্র এর সমালোচনা করে বলেন, একজন প্রেসিডেন্ট যখন নিজের পরিবারকে সমৃদ্ধ করতে একটি প্রাইভেট কোম্পানির বিরুদ্ধে কথা বলেন, তখন এটি খুবই অনৈতিক বলে মনে হয়।

আগে হোয়াইট হাউসের নীতিসংক্রান্ত বিষয় দেখতেন এমন একজন ব্যক্তি বলেছেন, নর্ডস্ট্রম ট্রাম্পের এমন অবস্থানের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারে।

ট্রাম্পের এই টুইট রিপাবলিকান নেতাদেরও অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। দলটির সিনেটর ডেভিড পারডিউ বলেন, ‘এটা আমার কাছে ব্যক্তিগত বিষয় বলেই মনে হয়েছে।’

তবে বরাবরের মতো হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন স্পাইসারও ট্রাম্পের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্টের নীতির প্রতি ‘সরাসরি আক্রমণ’। স্পাইসার সমালোচনাকারীদের নীতি নিয়েই প্রশ্ন তুলে বলেছেন, সন্তানের হয়ে একজন বাবা পক্ষ অবলম্বন করতেই পারেন। এখানে অন্য কিছু যাঁরা খুঁজছেন, তাঁরাই বরং ভুল পথে আছেন।

তবে সমালোচনাকারীরা মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ধরনের কার্যকলাপ অনেক বেশি ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই কাজে মনোনিবেশ করতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ‘সম্পূর্ণরূপে’ ছেড়ে দেবেন এবং স্বার্থ-সংঘাতের বিষয়গুলো এড়িয়ে চলবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু সমালোচকেরা বলেন, স্বার্থ-সংঘাত থেকে খুব সামান্যই বেরোতে পেরেছেন তিনি।