লন্ডনে বাংলাদেশিকে হত্যাকারীর ৪৩ বছরের কারাদণ্ড

ড্যারেন অসবর্ন ও মাকরাম আলী। ছবি: সংগৃহীত
ড্যারেন অসবর্ন ও মাকরাম আলী। ছবি: সংগৃহীত

গত রমজানে লন্ডনের একটি মসজিদের বাইরে মুসল্লিদের ওপর চালানো এক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মাকরাম আলী (৫১)। ওই ঘটনায় আটক হামলাকারী ড্যারেন অসবর্নকে ৪৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে এ রায় ঘোষণা করা হয়।

বিচারক চিমা গ্রাব ওই হামলাকে একটি সন্ত্রাসী আক্রমণ আখ্যায়িত করেন বলেন, উগ্রবাদী চিন্তা থেকে বর্ণবাদী আদর্শের প্রভাবেই মুসলিমদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করে ওই হামলা চালানো হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার জুরিবোর্ডের ১১ সদস্য সর্বসম্মতভাবে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার দায়ে অসবর্ণকে দোষী সাব্যস্ত করে। আটকের পর থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত হামলাকারী অসবর্ণ মোট ২২৪ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন। তার মোট সাজা থেকে এই সময়টি বাদ যাবে বলে জানিয়েছেন আদালত।

গত বছরের জুন মাসে উত্তর লন্ডনের ফিন্সব্যারি পার্ক মসজিদে তারাবির নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন মুসল্লিরা। এ সময় মুসল্লিদের ওপর ভ্যানগাড়ি উঠিয়ে দেন ৪৮ বছর বয়সী হামলাকারী অসবর্ন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু ঘটে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মাকরাম আলীর। আহত হন আরও ৯ জন। ৬ সন্তানের জনক মাকরাম আলী নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন।

আশপাশের লোকজন হামলাকারীকে ঘটনাস্থলেই আটকে ফেলেন। পরে তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। সেদিন হামলাকারী অসবর্ন বলছিলেন, তিনি সর্বোচ্চসংখ্যক মুসলিমকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। তবে শুনানিতে তিনি দাবি করেন, যখন হামলা চালানো হয়েছিল, তখন চালকের আসনে ছিলেন ‘ডেইভ’ নামের অন্য একজন। আদালত এটিকে অপরাধ ঢাকতে অসবর্নের বানানো গল্প বলে আখ্যায়িত করেন। ওয়েলসের বাসিন্দা অসবর্ন ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে কয়েক শ মাইল পাড়ি দিয়ে এসে লন্ডনে মুসল্লিদের ওপর ওই হামলা চালান।

শুনানিতে বলা হয়, অসবর্ন ১৫ বছর বয়স থেকে নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। গত ৩০ বছরে তিনি ১০২টি অভিযোগে মোট ৩৩ বার আদালতে হাজির হয়েছেন। হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে তাঁর মধ্যে বর্ণবাদী চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ইন্টারনেটে মুসলিম-বিদ্বেষী বিভিন্ন নেতার বক্তব্য শুনতেন বলে আলামত মিলেছে।

মাকরাম আলীর মেয়ে রোজিনা আখতার বলেন, ঘটনাস্থলের পাশেই তাদের বাসা। ফলে এ পথে হাঁটতে গিয়ে বাবা হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণা তাঁদের মনে পড়ে। মাকরাম আলীর জীবনে কোনো শত্রু ছিল না মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাবার এমন মৃত্যু তাঁরা মানতে পারছেন না।

ছয় সন্তানের জনক মাকরাম আলী ১০ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। বাংলাদেশে তাঁদের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথে।

হামলাকারী অসবর্নের বাবা ৭৩ বছর বয়সী জন অসবর্ন ডেইলি মেইলকে বলেন, জীবনের বড় একটি সময় তিনি বিদেশে কাটিয়েছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে। তাঁর অনেক মুসলিম বন্ধু রয়েছে জানিয়ে জন বলেন, ছেলের এই কর্ম তাঁর জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে।