যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ৫ জনে একজন কর্মী যৌন হয়রানির শিকার

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সের নেতা আন্দ্রে লিডসম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সের নেতা আন্দ্রে লিডসম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ওয়েস্টমিনস্টারে কাজ করেন, এমন প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। দেশটির পার্লামেন্টের একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের যৌন নিপীড়নের যেসব অভিযোগ দেশটির রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে রয়েছে, এ প্রতিবেদনে সে ব্যাপারটি আরও জোরালোভাবে উঠে এল।

যুক্তরাজ্যর পার্লামেন্টের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইনডিপেনডেন্টের এক খবরে এসব তথ্য তুলে ধরে হয়।

সম্প্রতি পার্লামেন্টের সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে পার্লামেন্ট সদস্যদের সমন্বয়ে আন্তদলীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে পার্লামেন্টে নিপীড়নের ঘটনা অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। এরপরই পার্লামেন্টের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে চালানো অনুসন্ধান কার্যক্রমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। অনুসন্ধানে পার্লামেন্টে কর্মরত সব ধরনের কর্মীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সের নেতা আন্দ্রে লিডসম বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।

হলিউডের প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের একের পর এক যৌন হয়রানির ঘটনা ফাঁস হওয়া এবং যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে নারীদের ভোটদানের অধিকারের শতবর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনের মধ্য এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো।

যৌন হয়রানি রুখতে ওয়েস্টমিনস্টারের কর্মীদের জন্য অভিযোগ দায়েরের নতুন স্বাধীন কার্যপ্রণালি তৈরির সুপারিশও করা হয়েছে। অনুসন্ধান করতে পার্লামেন্টের ১ হাজার ৩৭৭ জন কর্মীর সঙ্গে কথা হয়েছে।

প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত পার্লামেন্ট সদস্যদের এক সূত্র বলেছে, ‘নতুন পদ্ধতি সফল হবে কি হবে না, সেটা নিয়ে সমালোচনা থাকতে পারে। তবে এটা সংস্কৃতির পরিবর্তন করবে এবং পার্লামেন্টে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা তাঁদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবন ঝুঁকি ছাড়াই সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবেন।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুধু যৌন হয়রানি নয়, পার্লামেন্টের ৩৯ শতাংশ কর্মী কর্মস্থলে নির্যাতন ও হয়রানির কথা বলেছেন। এসব কর্মীর মধ্যে ৪৫ শতাংশ নারী ও ৩৫ শতাংশ পুরুষ। ভুক্তভোগীরা যাতে সহজে তাঁদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন, সে জন্য যে নতুন কার্যপ্রণালি তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে, তাতে পার্লামেন্ট সদস্যদের জন্য কর্মী নিয়োগে নতুন মানবসম্পদ নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে রাজনীতিবিদদের দ্বারা সরাসরি নিয়োগ পান কর্মীরা। তাই কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের অভিযোগ করা তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। অশোভন আচরণের জন্য দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ ও এ-সংক্রান্ত ঘটনার ব্যাপারে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে একটি স্বাধীন সংসদীয় কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

গত বছর ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্যার মাইকেল ফ্যালন অশোভন যৌন আচরণ করার জন্য পদত্যাগ করেন। এ ছাড়া পার্লামেন্ট সদস্য স্টেফেন ক্রাব, ক্রিস পিনসার, ড্যানিয়েল কাসজিনস্কিকেও সহকর্মীদের সঙ্গে অশোভন যৌন আচরণের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি তদন্তও শুরু করেছে। দলের নতুন শৃঙ্খলা প্যানেল থেকে তাঁরা বাদও পড়েছেন।

প্রতিবেদন সম্পর্কে লিডসম বলেন, ‘এটা আমাদের পার্লামেন্ট ও রাজনীতির জন্য অবিস্মরণীয় দিন। নতুন স্বাধীন কার্যপ্রণালি তৈরি করা হবে, যেটা দিয়ে আমরা পার্লামেন্টকে বিশ্বের সেরা পার্লামেন্টে পরিণত করতে চাই।’

যৌন নির্যাতন ও হয়রানির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হওয়া আন্দোলন হ্যাশট্যাগ মি টু’র (#MeToo) কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।