গবেষণাগারে মানব ডিম্বাণু

গবেষণাগারে মানব ডিম্বাণু
গবেষণাগারে মানব ডিম্বাণু

প্রথমবারের মতো গবেষণাগারে মানব ডিম্বাণু পরিপক্ব করার চেষ্টায় সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই অগ্রগতি প্রজনন চিকিৎসায় নতুন দুয়ার খুলে দেবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের মলিকুলার হিউম্যান রিপ্রোডাকশন সাময়িকীতে গত বৃহস্পতিবার এ–বিষয়ক একটি নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে। এই নিবন্ধের জ্যেষ্ঠ লেখক স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআরসি সেন্টার ফর রিপ্রোডাকটিভ হেলথের অধ্যাপক ইভলিন টেলফার। তিনি জানান, ডিম্বাশয়ের বাইরে ডিম্বকোষ পরিপক্ব করার চেষ্টায় সফল হয়েছেন তাঁরা। টিস্যুগুলো ২৫ বছর থেকে ৩৯ বছরের মধ্যবর্তী বয়সী ১০ নারীর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞানীরা প্রথমে বায়োপসির মাধ্যমে ডিম্বাশয়ের কোষ সংগ্রহ করেছেন। কোষগুলো পরিণত হওয়ার পর এগুলো এখন আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গবেষণাগারে শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এরপর ভ্রূণ সৃষ্টির অপেক্ষা। গবেষণাগারে এর আগেও নিষেক প্রক্রিয়া সম্ভব হলেও এবারই প্রথম ডিম্বাশয়ের বাইরে পরিণত ডিম্বাণু সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে।

অধ্যাপক ইভলিন টেলফার বলেন, ‘এই ডিম্বাণুগুলো থেকে যদি ভ্রূণ সৃষ্টিতে সফল হই আমরা, তাহলে ভবিষ্যতে প্রজনন চিকিৎসায় এর বহুমাত্রিক প্রয়োগ সম্ভব হবে।’ তিনি জানান, ভ্রূণ সৃষ্টির পর এগুলো কতটা স্বাস্থ্যবান হয়, তা-ই এখন দেখার বিষয়। যদি ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়, তাহলে বন্ধ্যা নারীদের দুঃখের দিনের ইতি ঘটবে।

এ ছাড়া ক্যানসারে আক্রান্ত নারী-পুরুষদের জন্যও সুখবর মিলবে এই গবেষণায় সফল হলে। বর্তমানে ক্যানসার–আক্রান্ত তরুণীদের ক্ষেত্রে তাঁদের ডিম্বাশয়ের টিস্যু সংরক্ষণ করে রাখা হয়। কারণ, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির কারণে অনেক সময় প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় বা লোপ পায়। এ ক্ষেত্রে ক্যানসার নিরাময়ের পর সংরক্ষিত ওই টিস্যু আবার স্থাপন করা হয় নারীর দেহে। এ বিষয়ে ইভলিন টেলফার বলেন, এটি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, কোনো কোনো তরুণীর দেহে বংশগতির ধারায় ক্যানসার কোষ বিস্তার লাভ করে। এ ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়ের সংরক্ষিত টিস্যুতে তা থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের গবেষণা পুরোপুরি সফল হলে এই ঝুঁকি আর থাকবে না বলে মনে করছেন ইভলিন। এমনকি গর্ভধারণের বয়স অতিক্রম করে যাওয়া নারীরাও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মা হতে পারবেন বলে মনে করছেন এই গবেষক। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী, আমরা এই অবস্থায় এখনো কিছু বলতে পারছি না।’