হাইতিতে যৌন কেলেঙ্কারি: অভিযুক্ত ছিলেন বাংলাদেশে

হাইতিতে ২০১০ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্প-পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতা চালানোর সময় ‘যৌন কেলেঙ্কারি’তে জড়িয়ে পড়েছিলেন অক্সফামের কিছু কর্মী। তাঁদের মধ্যে শীর্ষ এক কর্মকর্তা পরে অন্য একটি সংস্থার মিশনপ্রধান হয়ে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করে গেছেন বলে খবরে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য টাইমস গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ তোলে।

দ্য টাইমসের বরাত দিয়ে বিবিসি ও এএফপির খবরে বো হয়, ব্রিটেনের অন্যতম বৃহৎ দাতব্য সংস্থা অক্সফামের জ্যেষ্ঠ ত্রাণকর্মীরা হাইতিতে বড় ধরনের ওই ত্রাণ তৎপরতা চালানোর সময় বয়সে তরুণ এমন ছয়জন নারী যৌনকর্মী ভাড়া করেছিলেন। এ ঘটনা এমন এক পরিস্থিতিতে তাঁরা ঘটান, যখন প্রলয়ংকরী ওই ভূমিকম্পে দ্বীপদেশটি একরকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। মারা যায় তিন লাখের মতো মানুষ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্সফামের অভিযুক্ত ত্রাণকর্মীরা অর্থের বিনিময়ে ওই যৌনকর্মীদের সঙ্গে বাসাবাড়ি ও অতিথিশালায় শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। অন্তত একটি সূত্রের দাবি, যৌনকর্মীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ফুটেজে ত্রাণকর্মীদের গায়ে অক্সফামের টি-শার্ট দেখা গেছে।
এ ঘটনায় ২০১১ সালে একটি ঘরোয়া তদন্তকাজ চালায় দাতব্য সংস্থাটি। তদন্তে সংস্থাটির কিছু কর্মীর ক্ষেত্রে ‘দায়মুক্তির সংস্কৃতি’ দেখা যায়। ওই যৌনকর্মীদের কারও কারও অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সম্ভাবনাকে বাদ দেওয়া হয়নি তদন্তে।

দ্য টাইমস বলেছে, অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর রোল্যান্ড ভ্যান হাওয়ার মায়ারেন যৌনকর্মী ভাড়া করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে খবর বের হয়। তবে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থার মুখোমুখি হওয়া ছাড়াই পরে তিনি পদত্যাগ করেন। ওই কেলেঙ্কারির জেরে আরও দুই কর্মী পদত্যাগ করেন এবং চারজনকে বরখাস্ত করা হয়। স্পর্শকাতর এমন ঘটনার পরও অক্সফাম হাইতি কর্তৃপক্ষকে কিছু জানায়নি। তা ছাড়া নেওয়া হয়নি কোনো আইনি পদক্ষেপও।

গত শনিবার দ্য টাইমস অব লন্ডন-এর বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস-এর খবরে বলা হয়, ওই ঘটনার পর অক্সফামের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ভ্যান হাওয়ার মায়ারেন ২০১৪-১৬ মেয়াদে বাংলাদেশে ‘অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার’-এর মিশনপ্রধানের দায়িত্ব নেন। ফরাসি এই দাতব্য সংস্থার একজন মুখপাত্র বলেছেন, সংস্থাটি তাঁকে নিয়োগের আগে নিয়োগ-পূর্ব প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। কিন্তু অক্সফাম তাদের সঙ্গে কোনো সতর্কতামূলক বিষয় বিনিময় করেনি।

এ কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী পেনি মরডান্ট অক্সফামকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘দুঃখজনক’ ওই কেলেঙ্কারিতে যুক্ত কর্মীদের ব্যাপারে সংস্থার কাছে কোনো তথ্য থেকে থাকলে তা অবশ্যই কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।

পেনি মরডান্ট ঘোষণা দেন, তিনি অক্সফামের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সোমবার দেখা করবেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘তারা তদন্ত থেকে পাওয়া সব তথ্য যদি তুলে না দেয়, তবে আমি তাদের সঙ্গে ত্রাণ সরবরাহের একজন অংশীজন হিসেবে আর কাজ করতে পারব না।’

অক্সফাম হাইতিতে ১৯৭৮ সাল থেকে কাজ করছে।