যুক্তরাজ্যে সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখতে থেরেসার উদ্যোগ

যুক্তরাজ্যে সংবাদপত্রশিল্প টিকিয়ে রাখার উপায় খুঁজতে পর্যালোচনা কমিটি গঠনের ঘোষণা। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাজ্যে সংবাদপত্রশিল্প টিকিয়ে রাখার উপায় খুঁজতে পর্যালোচনা কমিটি গঠনের ঘোষণা। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যে সংবাদপত্রশিল্প টিকিয়ে রাখার উপায় খুঁজতে পর্যালোচনা কমিটি করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। গতকাল মঙ্গলবার ম্যানচেস্টারে এক ভাষণে সংবাদপত্রশিল্পের ভবিষ্যৎ পর্যালোচনার ঘোষণা দেন তিনি। থেরেসা মে বলেন, ‘একের পর এক ছাপা সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া আমাদের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।’

এই পর্যালোচনার নেতৃত্বে কে থাকবেন শিগগিরই তা ঠিক করা হবে বলে জানান থেরেসা মে। জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় ছাপা সংবাদপত্রগুলোর জন্য কীভাবে টেকসই তহবিল জোগানের ব্যবস্থা করা যায় সেটিও খতিয়ে দেখবে পর্যালোচনা কমিটি।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘বিশ্বাসযোগ্য’ সংবাদ পরিবেশকের সংখ্যা কমছে। এ বিষয়টি জনগণকে ‘আস্থা রাখা যায় না’ এমন সংবাদে প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে।

সংবাদমাধ্যমকে মঙ্গল বয়ে আনার একটি বড় শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন থেরেসা মে। তিনি বলেন, মানসম্মত সাংবাদিকতা তথ্য ও বিশ্লেষণ দিয়ে আমাদের মতামত গঠন ও আলোচনায় সাহায্য করে।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে করা প্রেস গেজেটের এক গবেষণার বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ওই সময় থেকে আগের ১৮ মাসে যুক্তরাজ্যে আঞ্চলিক ও স্থানীয় ৪৬টি ছাপা সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে। আর ২০০৫ সাল থেকে ছাপা সংবাদপত্র কমেছে ১৯৮টি। এর মধ্যে ‘ট্রিনিটি মিরর’ এবং ‘জন্সটন প্রেস’-এর মতো কোম্পানিগুলোকেও ছাপ কাগজ বন্ধ করতে হয়েছে বা একাধিক সংবাদপত্রকে একীভূত করতে হয়েছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যের অনেকগুলো জাতীয় পত্রিকা তাদের ছাপা কাগজের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। অধিকসংখ্যক মানুষ অনলাইনে সংবাদ পড়ায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠার কারণে এমনটি করতে হচ্ছে।

‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’ ২০১৬ সালে তাদের ছাপা সংস্করণ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। লোকসান কমাতে সম্প্রতি প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এবং ‘অবজারভার’ তাদের ছাপা কাগজের আকার ছোট করে ‘ট্যাবলয়েড’ সাইজে প্রকাশ করছে। এর আগে ‘দ্য টাইমস’ কাগজের আকার ছোট করে।

রিচার্ড ডেসমন্ডের কোম্পানি ‘নর্দান অ্যান্ড শেল’ প্রকাশিত ‘ডেইলি এক্সপ্রেস’, ‘সানডে এক্সপ্রেস’ এবং ‘ডেইলি স্টার’ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এগুলো কিনে নিতে আলোচনা চালাচ্ছে মিরর গ্রুপ।

দেশটির ‘দ্য নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন’ বলছে, সংবাদপত্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেল খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডেভিড ডিন্সমোর বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে সংবাদের গ্রাহক বেশ বেড়েছে। কিন্তু ডিজিটাল মাধ্যমে মানসম্মত সংবাদ পরিবেশনের জন্য যে বিনিয়োগ দরকার সেটি আসছে না।

ডিজিটাল মাধ্যম থেকে সংবাদ পরিবেশকেরা বিজ্ঞাপনের ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে কি-না, ফেসবুক এবং গুগলের মতো অনলাইন মাধ্যমগুলো কীভাবে সংবাদপত্র সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে এবং কীভাবে সেসব তথ্য কাজে লাগাচ্ছে তাও খতিয়ে দেখবে থেরেসা মে ঘোষিত পর্যালোচনা কমিটি। এ ছাড়া অনলাইনে নিম্ন মানের সংবাদ এবং চমকে দেওয়া শিরোনাম দিয়ে দর্শক টানা নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজবে এ কমিটি।