রাশিয়ার সমর্থন চান আব্বাস

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ছবি: রয়টার্স
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ছবি: রয়টার্স

দুই সপ্তাহ আগে মস্কো সফরে গিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এরপর গতকাল সোমবার রাশিয়া সফরে গেলেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আব্বাসের এই সফরের উদ্দেশ্য জেরুজালেম ইস্যুতে ফিলিস্তিনের পক্ষে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমর্থন আদায়।

গত বছরের শেষ দিকে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এতে  নতুন করে সংকটের সূত্রপাত হয়। এরপর থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে রাজি নন মাহমুদ আব্বাস। ২০ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম দখলে নেয় ইসরায়েল। অধিগ্রহণের পর এটিকে ইসরায়েলের অবিচ্ছেদ্য রাজধানী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা বরাবরই পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে ধরে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে চান।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালির অভিযোগ, ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করার জন্য আব্বাসের মনোবলের অভাব রয়েছে।

বর্তমানে মাহমুদ আব্বাস ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট অবসানে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় আর রাজি নন। তিনি তাঁর দেশবাসীর কাছে ওয়াদা করেছেন, জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি পূর্ণ স্বীকৃতি আদায় করবেন।

গত ২৯ জানুয়ারি রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, ইহুদি রাষ্ট্র ‘ধ্বংস’ করতে চায় ইরান। জবাবে ইসরায়েলকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করার বিষয়ে আশ্বস্ত করে রাশিয়া।

ইনস্টিটিউট ফর ইউএস অ্যান্ড কানাডিয়ান স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক তাত্ত্বিক আলেক্সান্ডার শুমিলিন বলেন, মাহমুদ আব্বাসের মস্কো সফর রাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ, তবে বাস্তবে তা খুব কমই কাজে আসবে বলে মনে করেন তিনি। এমনকি আব্বাসের এই মস্কো সফরে বড় কোনো সাফল্য চলে আসবে, এমন ভাবনা বাস্তবসম্মত নয় বলে মত দেন তিনি।

২০১৬ সালে রাশিয়া আব্বাস ও নেতানিয়াহুর মধ্যে কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়া মুখোমুখি সাক্ষাতের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তা আর হয়নি।

গত জানুয়ারি মাসে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে মনে হচ্ছে, দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সে সময় ল্যাভরভ এমনও বলেছিলেন, ট্রাম্পের প্রতি ফিলিস্তিনিদের ‘মনোভাব আমরা বুঝি’।

তাত্ত্বিক আলেক্সান্ডার শুমিলিন আরও বলেন, স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী যেকোনো সময়ের মধ্যে মস্কো ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক এখন তলানিতে। মাহমুদ আব্বাস আশা করছেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হবে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আক্রোশ মেটাতে রাশিয়া কিছু করবে।

২০১২ সালে ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ।

বসতি নিয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক ট্রাম্পের
এদিকে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েলের বসতি স্থাপন ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করছে। এই ইস্যুতে সতর্ক থাকতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ইসরায়েলের এক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করে যে ফিলিস্তিনিরা, সম্ভবত ইসরায়েলও শান্তির আনার ব্যাপারে প্রস্তুত নয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আলোচনায় শামিল না হলে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য সহায়তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দেন এবং পরে তা প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনেন।

ইসরায়েলের বসতি স্থাপন বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘বসতি স্থাপন সব সময়ই শান্তি প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করেছে। তাই আমি মনে করি, বসতি স্থাপন নিয়ে ইসরায়েলের খুব সতর্ক থাকা উচিত।’

১৯৬৭ সালে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমদখলে নেওয়ার পর প্রায় ১৪০টি বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল। সেখানে ছয় লাখের বেশি ইহুদি বাস করে। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে এসব বসতিকে অবৈধ বলে মনে করা হয়।