পদত্যাগে এএনসির চরমপত্র, রাজি নন জুমা

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে তাঁর দল ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)। পদত্যাগ না করলে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি। কিন্তু পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন জ্যাকব জুমা। এতে করে নজিরবিহীন এক সংকটে উপনীত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতি।

জুমার প্রস্থান প্রশ্নে গত সোমবার রাতে রাজধানী প্রিটোরিয়ার কাছে এএনসির ১৩ ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক হয়। এতে আলটিমেটামের সিদ্ধান্ত আসে। জ্যাকব জুমা ও এএনসির ডেপুটি প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মধ্যে পাঁচ দিনের আলোচনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পর সোমবার এএনসির বৈঠকটির আয়োজন করা হয়।

 এএনসির এক জ্যেষ্ঠ সূত্র বলে, ‘আমরা জুমাকে পদত্যাগের আহ্বান জানাব। সিরিল রামাফোসা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গেছেন।’ কিন্তু যখন রামাফোসা ফেরেন, তখন পরিস্থিতি জটিল ঠেকে। কারণ দুজনের মধ্যে গুরুগম্ভীর আলাপ হয়েছে। এ বিষয়ে জুমার মুখপাত্র কিংবা এএনসির কোনো কর্মকর্তার মন্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

সোমবারের বৈঠক চলাকালে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এসএবিসি জানায়, সরে যেতে রাজি হয়েছেন জুমা। তবে এর পরপরই জুমার মুখপাত্র বোঙ্গানি এনজিকুলুঙ্গা মন্তব্য করেন, ওই সংবাদটি ছিল ভুয়া। প্রসঙ্গত, এএনসির জাতীয় নির্বাহী কমিটির জুমাকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

 নির্ধারিত মেয়াদ অনুযায়ী, আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত জুমার প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালনের কথা। জনসমক্ষে কখনোই তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার কথা বলেননি।

 এদিকে, নাম না প্রকাশের শর্তে এএনসির এক কর্মকর্তা বলেন, পদত্যাগের আগে তিন মাসের নোটিশ দিতে হবে বলে জানিয়েছেন জ্যাকব জুমা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রালফ মাথেকগা বলেন, ‘জুমা শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি হলেন ব্যবস্থা। তাঁর সঙ্গে আরও অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ জড়িত। আমরা এএনসির মধ্যে ক্ষমতার লড়াই দেখছি। এটি এমন এক ধোঁয়াশা ও অস্পষ্ট অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে, তা একটা হাস্যরসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।’

দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্টে জ্যাকব জুমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রশ্নে ভোট হওয়ার কথা। তবে অতীতেও এ ধরনের বেশ কয়েকবারের প্রচেষ্টায় তিনি উতরে গেছেন। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দুর্নীতির কেলেঙ্কারির বোঝা জুমার মাথায়। এমনও বলা হয় যে নিজ দলের মধ্যে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার তৃণমূল পর্যায়ে সমর্থনও রয়েছে জুমার।

১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ শাসনের অবসানের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে সবচেয়ে বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন জুমা। দুর্নীতিসহ নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় তাঁর অবস্থান এখন অনেকটাই নড়বড়ে। এমনকি নিজ দলের ভেতর থেকেই ক্ষমতা ছাড়তে প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছেন তিনি। গত বছর ডিসেম্বরে সিরিল রামাফোসা এএনসির ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিজের দলের মধ্য থেকেই জুমার পদত্যাগের দাবি জোরেশোরে উঠতে শুরু করে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার জুমার পদত্যাগের দাবির পক্ষে আগের চেয়েও বেশি জনসমর্থন রয়েছে। উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে জোহানেসবার্গে এএনসির প্রধান দপ্তরে গতকাল স্থানীয় সময় বেলা দুটায় সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল।