জঙ্গলমহল পাহারায় ৩৫৫ সাবেক মাওবাদী

তাদের ভয়ে তটস্থ থাকত তিন জঙ্গলমহল বলে পরিচিতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তিন জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সেসব মাওবাদী এখন অস্ত্র ছেড়েছে। তাদের এ অঞ্চলের পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৩৫৫ সাবেক মাওবাদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন নিজ দপ্তরে।


পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী এলাকা হিসেবে চিহ্নিত জঙ্গলমহল। এই জঙ্গলমহলের বিস্তার পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া আর বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলকে ঘিরে। এই জঙ্গলমহলই ছিল মাওবাদীদের বিচরণক্ষেত্র। সবচেয়ে বেশি আনাগোনা ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় আসার পর জঙ্গলমহলে মাওবাদী তৎপরতা বন্ধের জন্য শক্ত হাতে হাল ধরেন। মাওবাদীদের আত্মসমর্পণের ডাক দেন। ঘোষণা দেন আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক প্যাকেজসহ ঘরবাড়ি ও চাকরির। এতে সাড়া দেয় প্রচুরসংখ্যক মাওবাদী। মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা কিষেণজিও মারা যান এই জঙ্গলমহলে পুলিশের সঙ্গে লড়াইয়ে। এখন শান্ত হয়েছে জঙ্গলমহল। সেখানে উন্নয়ন চলছে।

আত্মসমর্পণকারী ৩৫৫ জন মাওবাদীর সঙ্গে গতকাল পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নের সভাঘরে এক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানেই মমতা জানিয়ে দেন, জঙ্গলমহলে আত্মসমর্পণকারী ৩৫৫ জন মাওবাদী আজ জীবনের মূল¯স্রোতে ফিরে এসেছে।

মমতা বলেন, এই মাওবাদীরা এখন জঙ্গলমহলের পাহারাদার হিসেবে রয়েছে।

মমতা বলেছেন, ‘বিজেপি এখন আমাদের পার্শ্ববর্তী ঝাড়খন্ড রাজ্য থেকে মানুষ এনে জঙ্গলমহলকে অশান্ত করতে চাইছে। জঙ্গলমহল এখন শান্ত। বিজেপি চাইছে এখানে ঝাড়খন্ড থেকে মানুষ ঢুকিয়ে জাতিদাঙ্গা লাগাতে।’ এর বিরুদ্ধে সাবেক মাওবাদীদের সজাগ থাকতে বলেন।

কারও নাম উল্লেখ না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যারা আগে পুলিশ ছিল, এখন নেই, তাদের কথা আপনারা শুনবেন না। কথা শুনবেন, এখন যাঁরা পুলিশে রয়েছেন। তাঁদের পরামর্শে চলবেন।’

এ কথার মধ্য দিয়ে মমতা ইঙ্গিত দিয়েছেন এই এলাকার, বিশেষ করে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে। ভারতী ঘোষ একসময় মমতার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মমতাকে তিনি ‘মা’ ডেকেছিলেন। গত ২৬ ডিসেম্বর বদলি করায় ক্ষুব্ধ হন ভারতী ঘোষ। এরপরই তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। শুরু হয় ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা। ভারতী ঘোষ যখন পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ছিলেন, তখন তিনি শক্ত হাতে দমন করেছিলেন মাওবাদীদের। ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছিলেন মাওবাদীদের জীবনের মূল স্রোতে।