মালদ্বীপের কাছে চীনের যুদ্ধজাহাজ

• চলতি মাসেই যুদ্ধজাহাজগুলো পূর্ব ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে।
• এতে রয়েছে কয়েকটি ডেস্ট্রয়ার, অন্তত একটি ফ্রিগেট, একটি উভচর জাহাজ এবং তিনটি সহায়ক ট্যাংকার।
• মালদ্বীপে জরুরি অবস্থা দীর্ঘায়িত না করার আহ্বান জানিয়েছে ভারত।

যুদ্ধজাহাজবহর কেন অঞ্চলটিতে প্রবেশ করল, তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি চীন। রয়টার্স ফাইল ছবি
যুদ্ধজাহাজবহর কেন অঞ্চলটিতে প্রবেশ করল, তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি চীন। রয়টার্স ফাইল ছবি

রাজনৈতিক সংকটে পড়া মালদ্বীপে চলছে জরুরি অবস্থা। এর মাঝে পূর্ব ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করেছে চীনের ১১টি যুদ্ধজাহাজ। সব মিলিয়ে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের অবস্থা এখন আরও সংকটে।

এদিকে মালদ্বীপে জরুরি অবস্থা দীর্ঘায়িত না করার আহ্বান জানিয়েছে ভারত। দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) স্পিকার ও পার্লামেন্ট সদস্যদের জোটের চেয়ারপারসন মালদ্বীপের পার্লামেন্টের স্পিকারের প্রতি দেশটিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

১ ফেব্রুয়ারি মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া বিরোধী নয়জন রাজনৈতিক নেতাকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেন। তাঁদের মধ্যে বিদেশে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদও রয়েছেন। ২০১৫ সালে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন নাশিদ। এরপর তাঁর ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই একই দিন সর্বোচ্চ আদালত প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের দল থেকে বহিষ্কৃত ১২ আইনপ্রণেতাকেও স্বপদে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। এই ১২ আইনপ্রণেতার ওপর থেকে বহিষ্কারাদেশ ফিরিয়ে নেওয়া হলে মালদ্বীপের ৮৫ সদস্যের আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে সরকারি দল। তবে গত রোববার বিরোধী ১২ আইনপ্রণেতার ওপর থেকে বহিষ্কারাদেশ ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ প্রত্যাহার করে নেন সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের ওই আদেশের পর থেকেই দেশটিতে সরকার-আদালত দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। এর জেরে ৬ ফেব্রুয়ারি ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন। গতকাল মঙ্গলবার এই জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্টের চাওয়ায় জরুরি অবস্থার মেয়াদ গতকাল আরও এক মাস বাড়িয়েছে পার্লামেন্ট।

তবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কানাডাসহ জাতিসংঘ প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জরুরি অবস্থা তুলে নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।

চীনের সংবাদমাধ্যম সিনা.কম.সিএন গত রোববার এক খবরে জানিয়েছে, চলতি মাসেই চীনের ওই যুদ্ধজাহাজগুলো পূর্ব ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। এতে রয়েছে কয়েকটি ডেস্ট্রয়ার, অন্তত একটি ফ্রিগেট, ৩০ হাজার টনের একটি উভচর জাহাজ এবং তিনটি সহায়ক ট্যাংকার। তবে এই জাহাজবহর কেন ওই অঞ্চলে প্রবেশ করল, তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি চীন। এ বিষয়ে জানতে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো উত্তর মেলেনি। সিনা.কম.সিএন ওই জাহাজবহরের যাত্রার সুনির্দিষ্ট তারিখ জানায়নি।

ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের ওপর প্রভাব বিস্তার নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বৈরিতা রয়েছে। বেইজিংয়ের সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক সড়ক’ চুক্তিতে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন স্বাক্ষর করার পর এই বৈরিতা আরও প্রকট হয়। এশিয়া মহাদেশ ও তার বাইরে বাণিজ্য ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়তে এই উদ্যোগ নিয়েছে চীন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আশা করছি, মালদ্বীপ সরকার জরুরি অবস্থা দীর্ঘায়িত করবে না।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বিচার বিভাগসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে এবং সাংবিধানিক পথে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দিতে হবে। ১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া আদেশের পূর্ণ বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানিয়েছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 মালদ্বীপের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সার্কের স্পিকার ও পার্লামেন্ট সদস্যদের জোটের চেয়ারপারসন কারু জয়সুরিয়া। মালদ্বীপের স্পিকার আবদুল্লা মাসিহ মোহাম্মদের কাছে লেখা এক চিঠিতে কারু জয়সুরিয়া আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান অনুসন্ধানেরও আহ্বান জানান। জয়সুরিয়া লেখেন, ‘আপনার প্রতি সমাধান অনুসন্ধানের মাধ্যমে মজলিশকে (মালদ্বীপের পার্লামেন্ট) কার্যকর করার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা, যাতে করে নির্বাচিত মজলিশ সদস্যরা তাঁদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারেন।’