ভারতজুড়ে ভাষাশহীদদের স্মরণ

নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান দুই বাংলার আমন্ত্রিত অতিথিরা। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বেনাপোল-পেট্রাপোল নো-ম্যানসল্যান্ডে (শূন্যরেখা) মিলিত হন তাঁরা। ছবি: এহসান-উদ-দৌলা
নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান দুই বাংলার আমন্ত্রিত অতিথিরা। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বেনাপোল-পেট্রাপোল নো-ম্যানসল্যান্ডে (শূন্যরেখা) মিলিত হন তাঁরা। ছবি: এহসান-উদ-দৌলা

নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ভারতজুড়ে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজ বুধবার দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করেছে নানা অনুষ্ঠানের। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওডিশা, ছত্তিশগড়সহ বিভিন্ন রাজ্যের বাংলাভাষী অঞ্চলে দিনটি পালিত হয় যথাযোগ্য মর্যাদায়।

সকালে পার্ক সার্কাস এলাকায় কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশন গ্রন্থাগার থেকে বের হয় প্রভাতফেরি। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় উপহাইকমিশনে নির্মিত শহীদ মিনারে। পরে সেখানে আলোচনা সভা ও বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে থেকে কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ভাষা চেতনা সমিতি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল নবজাগরণ। এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকেও যোগ দিয়েছেন ২৫ জন শিল্পী। রাত ১২টা ১ মিনিটে সেখানে মশাল মিছিলেরও আয়োজন করা হয়। এরপর সারা রাত চলে কবিতা, গান, নাটক ও নৃত্যানুষ্ঠান। আর সস্তায় মিলেছে ভাত, মাছ, আলু, পোস্তর খাবার।

কলকাতার ভাষাশহীদ স্মারক সমিতি কলকাতার কার্জন পার্কে অবস্থিত ভাষা উদ্যানের শহীদ স্মারকে সকালে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে দিনটির সূচনা করে। দিনভর এখানে চলে নানা অনুষ্ঠান। কলকাতার বিড়লা প্ল্যানেটারিয়াম চত্বরে নির্মিত শহীদ স্মৃতি উদ্যানের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্থানীয় লোকজন।

ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সীমান্ত ছাপিয়ে এক আঙিনায় মিশে যান দুই বাংলার মানুষ। আজ দুপুরে বেনাপোল-পেট্রাপোল নো-ম্যানসল্যান্ডে। ছবি: এহসান-উদ-দৌলা
ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সীমান্ত ছাপিয়ে এক আঙিনায় মিশে যান দুই বাংলার মানুষ। আজ দুপুরে বেনাপোল-পেট্রাপোল নো-ম্যানসল্যান্ডে। ছবি: এহসান-উদ-দৌলা

রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও শান্তিনিকেতনে দিনটি পালিত হয় মহাসমারোহ। সেখানকার শিক্ষার্থীরা আলপনা আঁকেন সড়কে। যোগ দেন আলোচনা সভা, প্রভাতফেরি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।

উত্তর কলকাতার হেদুয়া পার্কেও আয়োজন করা হয় ভাষা দিবসের। কলকাতার বেলে ঘাটা মোড়ে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ধাঁচে গড়া শহীদ মিনারেও এদিন শ্রদ্ধা জানান ভাষাপ্রেমীরা।
এ ছাড়া কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহর ও গ্রামের স্কুল-কলেজেও দিনটি পালিত হয় যথাযোগ্য মর্যাদায়। পশ্চিমবঙ্গ-ভারত সীমান্তের বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে দিনটি পালিত হয়েছে আনন্দঘন পরিবেশে। দুই বাংলার মানুষ মিলিত হয় জিরো পয়েন্টে। শ্রদ্ধা জানায় ভাষাশহীদদের প্রতি।

ভাষাসৈনিক বরকতের গ্রাম মুর্শিদাবাদের বাবলা গ্রামেও দিনটি পালিত হয় সাড়ম্বরে। এখানে আয়োজন করা হয় প্রভাতফেরি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বরকতের স্কুল তালিবপুর হাইস্কুলেও আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। এখন অবশ্য এখানে আর থাকেন না ভাষাসৈনিক বরকতের কোনো স্বজন। বরকতের মা যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন তিনি ভাষা দিবসের দিন গ্রামবাসীদের পায়েস রেঁধে খাওয়াতেন। এলাকাবাসী তাঁদের গর্বের ভাষাসৈনিকের স্মরণে এবারও দিনটি পালন করেছে যথাযোগ্য মর্যাদায়।