রজনীকান্তের পথে কমল হাসান

কমল হাসান
কমল হাসান

ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা কমল হাসান এবার নিজের রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা করলেন। অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল তিনি রাজনীতিতে নামছেন। কারণ, বিভিন্ন সময় তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এআইএডিএমকের নানা কাজের ব্যাপক সমালোচনা করে টুইট করতেন। এবার সরাসরি রাজনীতিতে নামলেন। দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের সুপারস্টার রজনীকান্তের পর এ অভিনেতা রাজনৈতিক দল গঠন করলেন।

তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক রাজধানী বলে পরিচিত মাদুরাইয়ে দল গঠনের ঘোষণা দেন কমল হাসান। বুধবার সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণার সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ৬২ বছর বয়সী অভিনেতা কমল হাসান বলেন, ‘আমার দলের নাম মাক্কাল নেদি মায়াম (ইংরেজিতে পিপলস জাস্টিস পার্টি)।’ উপস্থিতি জনতার হর্ষধ্বনির মধ্যই তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের নেতা নই, আপনাদের হাতিয়ার। এখানে যাঁরা উপস্থিত হয়েছেন, তাঁরা সবাই নেতা।’ এখানেই তিনি দলের লোগো উন্মোচন করেন। আর উপস্থিত লোকজন বিপুল করতালিতে তা সানন্দে গ্রহণ করেন।

গতকাল মঙ্গলবার ভারতের পিপলস প্রেসিডেন্ট বলে পরিচিত প্রয়াত আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন (এ পি জে) আবদুল কালামের বাড়িতে যান কমল হাসান। ভারতের সাবেক এই রাষ্ট্রপতির বাড়ি রামেশ্বরমে গিয়ে এ পি জে আবদুল কালামের ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কমল হাসান। এরপর সেখানকার মৎস্যজীবীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। সেখান থেকে মাদুরাইতে এক জনসভায় দলের নাম ঘোষণা করলেন কমল হাসান। দলের পতাকাও প্রকাশ করা হয়।

গত বছরের শেষ দিনে সুপারস্টার রজনীকান্ত সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণায় সবার প্রিয় ‘থালাইভার’ তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক নেতা বনে যান। ৬৭ বছর বয়সী তারকা টুইটারে তাঁর নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার দায়িত্ব পালন করব। এখনই সময়। আমরা ধারা পরিবর্তনের জন্য কাজ করব।’

রজনীকান্তের এ ঘোষণার প্রায় আড়াই মাস পরে দক্ষিণের আরেক নায়ক কমল হাসান রাজনীতির মাঠে নামলেন। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে রজনীকান্তের সঙ্গে গত রোববার দেখা করেন কমল হাসান। তিনি চেন্নাইয়ের পয়েজ গার্ডেনে রজনীকান্তের বাড়িতে যান। এরপর রজনীকান্ত বলেন, ‘কমল খ্যাতি বা অর্থের লোভে রাজনীতিতে প্রবেশ করছে না। কমল তামিলনাড়ুর সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করতে চায়। আমি ঈশ্বরের কাছে ওর সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করব।’

ছোটবেলায় কমল হাসানের অভিনয়জীবন শুরু হয়েছিল। ১৯৬০ সালের ‘কালাথোর কান্নাম্মা’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। ওই সময় তাঁর বয়স মাত্র পাঁচ বছর। এই ছবিতে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর জাতীয় পুরস্কার জিতেছিলেন। নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করা থেকে শুরু করে খলনায়ক, কমেডিয়ানসহ বিচিত্র সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন কমল হাসান। এমনকি অভিনয় করেছেন নারী চরিত্রেও। নিপুণ অভিনয়শৈলীর জন্য কমল হাসানকে তুলনা করা হয় হলিউডের জ্যাক নিকলসন ও টম হ্যাংকসের সঙ্গে। শুধু অভিনয়ই নয়, তিনি একাধারে নির্মাতা, প্রযোজক, সংগীতশিল্পী, কোরিওগ্রাফার, চিত্রনাট্যকার ও গীতিকার হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

তামিল ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি ১৯৭৭ সালে ‘আয়না’ ছবির মাধ্যমে কমল হাসান পা রাখেন বলিউডে। বলিউডের প্রখ্যাত নির্মাতা রমেশ সিপ্পির ‘সাগর’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি পেয়েছিলেন সেরা অভিনেতা ও সেরা সহ-অভিনেতার মনোনয়ন। শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর জাতীয় পুরস্কার ছাড়াও তিনবার ভারতের শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন কমল হাসান। এ ছাড়া ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ আরও বহু পুরস্কার লাভ করেন। এ পর্যন্ত তিনি তামিল, হিন্দি, বাংলা, তেলেগু, কানাড়া ও মালয়ালাম ভাষায় প্রায় ২০০ ছবিতে অভিনয় করেছেন।