শিলংয়ে রবিঠাকুরের স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে

বিশ্বকবির স্মৃতিধন্য চট্টগ্রামের সাবেক ডিভিশনাল কমিশনার কে সি দের শিলংয়ের বাড়িতে বসেছে রবিঠাকুরের মূর্তি।
বিশ্বকবির স্মৃতিধন্য চট্টগ্রামের সাবেক ডিভিশনাল কমিশনার কে সি দের শিলংয়ের বাড়িতে বসেছে রবিঠাকুরের মূর্তি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় শহর ভুলতে বসেছে তাঁর স্মৃতিকে। অথচ অবসর পেলেই বিশ্বকবি ছুটে আসতেন এই শহরে। সিলেট হয়ে তিন-তিনবার ছুটে এসেছেন খাসিয়া পাহাড়ের এই শহরে। কিন্তু আজ সবই ভুলতে বসেছে শিলং।
‘শেষের কবিতা’র মাধ্যমে বহু বাঙালিকে শহরটিতে টেনে আনেন রবীন্দ্রনাথ। সিলেটের পার্শ্ববর্তী শৈলশহরে একসময়ে বসবাস ছিল বহু বাংলাভাষীর। আজ সবই প্রায় অতীত। কিছু বাঙালি থাকলেও বাংলা ভাষার চর্চা নেই বললেই চলে।
কলেজপড়ুয়া মৌমিতা, সুদেষ্ণা বা অলোকরা জানেনই না, তাঁদের এই শহরেই তিনবার এসেছিলেন বিশ্বকবি। ভোটের বাজারেও ব্রাত্য রবীন্দ্রনাথ। কারণ, বাঙালিরাই এখন শিলংয়ের একরকম দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাঙালি ব্যবসায়ী বললেন প্রথম আলোকে।
কারণ, মেঘালয়ে এখন বাঙালিদের জমির কোনো অধিকার নেই। অথচ তিনজন ভোটপ্রার্থী বাঙালি। তবু সম্পত্তির ওপর এই উপজাতি রাজ্যটিতে কোনো অধিকার দিতে নারাজ রাজ্য সরকার।
রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে জানান, রবীন্দ্রনাথ এই শহরে প্রথমবার এসেছিলেন ১৯১৯ সালের অক্টোবরে। ছিলেন ব্রুকট সাইড রোডের একটি বাড়িতে। সেখানে ২০ থেকে ২২ দিন থেকে চলে যান সিলেট। ১৯২৩ সালে লেডি রাণু মুখার্জিসহ এসেছিলেন জিতভূমে। সেখানে বসেই শুরু করেছিলেন ‘রক্তকরবী’। শেষবার ১৯২৭-এ আসেন বিশ্বকবি শিলংয়ের লাইমখরার আপল্যান্ডসোর একটি বাড়িতে।
জানা গেল, কবির কাটানো বাড়িগুলোর বেশির ভাগই বিক্রি হয়ে গেছে। এমনকি ‘শেষের কবিতা’য় বর্ণিত জিতভূমের সেই রডডেনড্রনগাছওয়ালা বাড়িটির মালিকানাও সম্প্রতি হাতবদল হয়েছে।
একমাত্র রবীন্দ্রনাথের প্রথমবার শিলং-দর্শনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি রয়েছে। সেখানেই বসেছে রবিঠাকুরের মূর্তি। বাড়িটি ছিল সেই সময়কার চট্টগ্রাম ডিভিশনের কমিশনার কিরণচন্দ্র দের। বর্তমানে রাজ্য সরকার অবশ্য বাড়িটি সুরক্ষিত রেখেছে।
এ ব্যাপারে ঊষারঞ্জন জানান, মেঘালয়ে বাঙালির সংস্কৃতিই প্রায় লুপ্ত পেতে চলেছে। বহু প্রাচীন বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনও ধুঁকছে শিলংয়ে। তাই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বাড়তি উৎসাহ দেখানোর কেউ নেই বলেই তিনি মনে করেন।