চীনের মদদে পাকিস্তান বাংলাদেশিদের ভারতে ঢোকাচ্ছে: ভারতীয় সেনাপ্রধান

ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছেন, চীনের মদদে পাকিস্তান ভারতে বাংলাদেশিদের ঢোকাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছেন, চীনের মদদে পাকিস্তান ভারতে বাংলাদেশিদের ঢোকাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ থেকে লোক ঢোকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। তাঁর অভিযোগ, এর পেছনে রয়েছে পাকিস্তান। চীনের মদদে একটি ছায়াযুদ্ধের অংশ হিসেবে ভারতের ওই এলাকাকে ‘অস্থির’ করে তুলতেই এ কাজ করা হচ্ছে।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার বিষয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে গতকাল বুধবার ভারতীয় সেনাপ্রধান এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিবেশী পরিকল্পিতভাবে অভিবাসন প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। তারা সব সময় ওই এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টায় ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।’

ভারতের পশ্চিমে পাকিস্তানের অবস্থান। অন্যদিকে দেশটির উত্তর সীমান্তে চীনের অবস্থান। জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিবেশী ছায়াযুদ্ধে ভালোভাবে ভূমিকা রেখে চলেছে। আমাদের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের প্রতিবেশী (চীন) এতে মদদ দিচ্ছে এবং তারা চায় এই এলাকা যেন অস্থির থাকে। আমরা এরপরও কিছু অভিবাসন ঘটতে দেখব। এ সমস্যা চিহ্নিত করা ও সার্বিক পর্যবেক্ষণের মধ্যেই এর সমাধান আছে।’

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভারতের আসামে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ একটি বড় ঘটনা এবং রাজ্য সরকার এখন অবৈধ বসবাসকারীদের খুঁজে বের করতে সরকারিভাবে নাগরিকদের নিবন্ধন করার উদ্যোগ নিয়েছে।

সেমিনারে আসামের স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দল নিয়েও মন্তব্য করেছেন জেনারেল বিপিন রাওয়াত। ওই দলটির নাম অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)। দলটির প্রধান নেতা বদরুদ্দিন আজমল এবং দলটির প্রতি স্থানীয় মুসলমানদের সমর্থন বেশি।

বিপিন রাওয়াত বলেছেন, ‘আসামে এআইইউডিএফ নামের একটি দল আছে। আপনারা দেখবেন, এটি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) চেয়েও দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। ১৯৮৪ সালে বিজেপি এখানে মাত্র দুটি আসনে জয়ী হয়েছিল। এআইইউডিএফ তার চেয়েও দ্রুত এগোচ্ছে।’

২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এআইইউডিএফ। বর্তমানে লোকসভায় এই দলটির তিনজন সদস্য রয়েছেন এবং রাজ্যসভায় আছেন ১৩ জন আইনপ্রণেতা।

জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেন, আসামের নয়টি জেলায় মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেড়েছে। আগে পাঁচটি জেলায় মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পরিলক্ষিত হয়েছিল।

গতকাল বুধবারের সেমিনারে জেনারেল রাওয়াতের বক্তব্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেনাপ্রধান হয়ে একটি স্থানীয় রাজনৈতিক দলের বিষয়ে তাঁর মন্তব্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর কিছু সূত্র দাবি করেছে, সেনাপ্রধানের বক্তব্যে ‘রাজনৈতিক বা ধর্মীয়’ কিছু ছিল না। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ওই সূত্রগুলো জানিয়েছে, জেনারেল বিপিন রাওয়াতের বক্তব্যে ‘বিতর্কিত’ কিছুই ছিল না।

এদিকে অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (এআইইউডিএফ) নেতা বদরুদ্দিন আজমল এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘জেনারেল বিপিন রাওয়াত একটি রাজনৈতিক বিবৃতি দিয়েছেন, আশ্চর্য! গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্যবোধে গড়ে ওঠা একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান যদি বিজেপির চেয়ে দ্রুতগতিতে হয়, তাতে সেনাপ্রধানের উদ্বেগের কী আছে? বড় দলগুলোর অপশাসনের কারণেই এএপি, এআইইউডিএফের মতো বিকল্প দলগুলো গড়ে উঠেছে।’