মানবাধিকারে অবজ্ঞা বিশ্বনেতাদের

ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিন , সি চিন পিং
ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিন , সি চিন পিং

প্রতিহিংসামূলক নীতি ও ঘৃণাভরা বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্বনেতারা লাখ লাখ মানুষের মানবাধিকারকে অবজ্ঞা করছেন। তাঁদের এসব কাজ বৈশ্বিক প্রতিবাদী আন্দোলনকে গতিশীল করেছে। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিবেদনে এমন কথাই বলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে যেসব নেতা প্রতিহিংসাপরায়ণ নীতি গ্রহণ করেছেন, তাঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও রয়েছেন।

অ্যামনেস্টির মহাসচিব সলিল শেঠি বলেন, ‘ঘৃণা ও ভয়ের অপছায়া বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে আবির্ভূত হয়েছে। এই খারাপ সময়ে মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো অল্প কিছু সরকারকে আমরা পেয়েছি। এর বিপরীতে আল-সিসি, দুতার্তে, মাদুরো, পুতিন, ট্রাম্প ও সি ঔদাসীন্যভাবে লাখ লাখ লোকের অধিকারকে অবজ্ঞা করছেন। শেঠি তাঁর বক্তব্যে মিসর, ফিলিপাইন ও ভেনেজুয়েলার নেতাদের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন।

‘বিশ্ব মানবাধিকার অবস্থা’ শীর্ষক অ্যামনেস্টির ওই প্রতিবেদনে বিশ্বনেতাদের মানবাধিকার অবজ্ঞা করার প্রমাণ হিসেবে বেশকিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ছয় মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের বিতর্কিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভেনেজুয়েলা সরকারের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, ফিলিপাইনে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয় প্রতিবেদনে উঠে আসে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিপাইন সরকারের অভ্যন্তরীণ তথ্যমতে, ২০১৬ সালের জুন থেকে চলা দেশটির প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের মাদকবিরোধী অভিযানে ২০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। ভেনেজুয়েলায় গত বছর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত কয়েক ডজন সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী নিহতের ঘটনায় সরকারি বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করার প্রমাণ রয়েছে।

ওয়াশিংটনের জন্য সতর্কতা

১৯৬১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম শুরুর পর প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলন করে বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি। এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের লিঙ্গ পরিবর্তনকারী ব্যক্তিদের প্রতি বৈষম্য, কড়া ভাষায় গণমাধ্যমকে সমালোচনা, অভিবাসীবিরোধী মন্তব্যের কথা তুলে ধরে সংগঠনটি।

বিশ্বের ১৫৯টি দেশের ওপর এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিধন; ইরাক, সিরিয়া ও সুদান সংকটের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে বিশদভাবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, সমাজে ঘৃণা উসকে দেওয়া আর মানবাধিকার সুরক্ষায় বিশ্বজুড়ে নেতৃত্বের অভাবের ফলাফল হচ্ছে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নৃশংসতা।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতাদের ‘ঘৃণায় পরিপূর্ণ ভাষা’ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যকে স্বাভাবিক করে তুলছে। অ্যামনেস্টির মহাসচিব সলিল শেঠি বলেন, ‘সমাজে ঘৃণা, সংখ্যালঘুদের বলির পাঁঠা বানানো আর তাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়ানোকে উৎসাহিত করার চূড়ান্ত প্রকাশ আমরা দেখেছি রোহিঙ্গাদের নিধনের জন্য তাদের ওপর নৃশংস সেনা অভিযানের মধ্যে।’

মিয়ানমারের পাশাপাশি ইরাক, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনেও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি। তারা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন মানবতার পাশে দাঁড়ায়নি। বরং তাদের উদাসীনতার কারণে লাখ লাখ মানুষ তাদের অধিকার হারিয়েছে।