মাত্র তিনজন এই ভাষায় কথা বলেন!

এই তিনজন মনে করেন, তাঁদের মৃত্যুর সঙ্গে বিলুপ্ত হবে ‘বাদেশি’ ভাষা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
এই তিনজন মনে করেন, তাঁদের মৃত্যুর সঙ্গে বিলুপ্ত হবে ‘বাদেশি’ ভাষা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

একবার ভাবুন তো, আপনি একটি ভাষার কয়েকটি শব্দ শিখে নিচ্ছেন, যে ভাষায় সারা দুনিয়ায় মাত্র তিনজন বলে থাকেন! ‘বাদেশি’ নামের এই ভাষা একসময় ব্যাপক চর্চা হতো। এখন তা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। কারণ, মাত্র তিনজন ব্যক্তি এই ভাষায় কথা বলে থাকেন।

আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের বরফাচ্ছাদিত দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বাদেশি ভাষায় একসময় কথা বলার প্রচুর লোক ছিল। তবে বিশিগ্রাম ভ্যালিতে তিনজন বয়স্ক ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া গেছে, যাঁরা এই ভাষায় কথা বলেন। ওই তিনজনের ধারণা, তাঁদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এই ভাষার বিলুপ্তি ঘটবে। তাঁরা তিনজন হলেন রহিম গুল, সাইদ গুল ও আলী শের।

ওই তিনজনের একজন রহিম গুলের বয়স কত, তা তিনি জানেন না। তাঁকে দেখতে ৭০ বছর বয়সী মনে হয়। রহিম গুল বলেন, এর আগের প্রজন্মে গ্রামে বাদেশি ভাষায় কথা বলত নয়-দশটি পরিবার। এসব পরিবারের পুরুষেরা অন্য গ্রামের ভিন্ন ভাষার নারীদের বিয়ে করে আনার পর এই ভাষার ব্যবহার ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ওই নারীদের বেশির ভাগের ভাষা ছিল তরওয়ালি। দেখা যেত, মায়ের ভাষায় কথা বলা শুরু করে তাঁর ছেলেমেয়েরা। এভাবে আস্তে আস্তে বাদেশি ভাষায় কথা বলার লোক কমতে থাকে।

জানা গেছে, ওই এলাকায় এখন তরওয়ালি ভাষার দাপট বেশি।

রহিম গুলের চাচাতো ভাই সাইদ গুল (৫০) বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন তরওয়ালি ভাষায় কথা বলে।’

ওই এলাকায় চাকরির কোনো সুযোগ নেই। এই তিনজন তাই পর্যটন এলাকা স্বাত জেলায় সময় কাটান। সেখান থেকে তাঁরা পশতু ভাষা রপ্ত করেছেন। সেই ভাষাতেই অন্যদের সঙ্গে কথা বলেন। রহিম গুল ও সাইদ গুল নিজেদের মধ্যে বাদেশি ভাষায় কথা বলতে গিয়ে এখন হরহামেশাই দু-একটি শব্দ ভুলে যান।

বাদেশি ভাষায় কথা বলার সুযোগ কমে যাওয়ায় এই তিনজনও এখন ভাষাটি ভুলতে বসেছেন।

রহিম গুলের একটি ছেলে আছেন। সেই ছেলের পাঁচ সন্তান রয়েছে। তবে তারা সবাই তরওয়ালি ভাষায় কথা বলে। রহিম গুলের ছেলে বলেন, তাঁর মা তরওয়ালি ভাষায় কথা বলতেন। বাসায় বাবা-মা কখনো বাদেশি ভাষায় কথা বলেননি। তাই ছোটবেলায় বাদেশি ভাষা শেখার কোনো সুযোগ পাননি তিনি। বাদেশি ভাষায় কয়েকটি শব্দ শুধু জানেন, ভাষাটি জানেন না। তাঁর সন্তানেরাও তরওয়ালি ভাষায় কথা বলে। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৩২ বছর। এখন আর বাদেশি ভাষা শেখার কোনো সুযোগ নেই। ভাবতেই খারাপ লাগে, বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এই ভাষাটিও শেষ হয়ে যাবে।’

পাকিস্তানের বিপন্ন কিছু ভাষা সংরক্ষণের জন্য কাজ করছেন সাগর জামান নামের একজন ভাষা বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘আমি তিনবার ওই এলাকায় গেছি। সেখানের বাসিন্দারা আমার সামনে বাদেশি ভাষায় কথা বলতে আড়ষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া সেখানে তরওয়ালি ও পশতু ভাষায় কথা বলা ব্যক্তিরা বাদেশি ভাষার লোকজনকে অবজ্ঞার চোখে দেখে। এ কারণে বাদেশি ভাষাভাষীর লোকজন এই ভাষায় কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন।’