বাইরে ভিলেন, দেশে হিরো

পশ্চিমের কাছে তিনি সবচেয়ে বড় গণশত্রু। যিনি প্রতিবেশীর কাছে থেকে জমি কেড়ে নেন। অন্য দেশের নির্বাচনে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন। তিনি এমন এমন সব অস্ত্র থাকার কথা জানান দেন, যা দিয়ে নাকি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া যাবে।

এত সব ‘সুখ্যাতি’ যে ব্যক্তিটির, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিদেশে তাঁর এত কুখ্যাতি জন্যই কিনা দেশে তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। আসছে নির্বাচনে তাঁর জয় অবশ্যম্ভাবী।

প্রায় দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থেকে পুতিন বিরুদ্ধবাদীদের নির্মূল করেছেন। আর দেশের গণমাধ্যমের ওপর আরোপ করেছেন কঠোর নিয়ন্ত্রণ।

১৮ মার্চ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। পুতিন-বিরোধিতায় সবচেয়ে সরব ব্যক্তিটি নির্বাচনই করতে পারছেন না। তিনি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত।

রাশিয়ার লাখ লাখ মানুষের কাছে পুতিন হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি ১৯৯০-এর দশকের সেই টালমাটাল পরিস্থিতি থেকে দেশে স্থিতিশীলতা এনেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর নাকাল অবস্থা থেকে মস্কোকে বিশ্ব দরবারে স্থায়ীত্বশীল আসনে বসান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক কনস্ট্যানটিন কালাশেভ বলেন, ‘পুতিন হচ্ছেন আয়নার মতো। যে যা-ই চান, তাঁর মধ্যে দেখতে পারেন।’ কালাশেভ বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, তিনি রাশিয়াকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছেন। তিনি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছেন। অনেকেরই ধারণা, তিনি জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছেন। পেনশন সঠিক সময়ে পাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন তিনি।’

দেশে যখন পুতিনের এই ভাবমূর্তি, উল্টো চিত্র কিন্তু পশ্চিমের দেশগুলোয়। পশ্চিমের সাময়িকীগুলোর প্রচ্ছদচিত্রে টার্মিনেটরের সেই ভয়ালদর্শন চেহারার রোবট, হিটলার বা ব্যাটম্যানের চেহারা পুতিনের সঙ্গে মেলানো হয়েছে।

আর এ প্রসঙ্গে কালাশেভ বলেন, ‘পশ্চিমে তিনি যখন শত্রু, এর অর্থ হচ্ছে তিনি ঝানু রাজনীতিক। তারা আপনাকে ভয় পায়, এর অর্থ হলো তারা আপনাকে শ্রদ্ধা করে।’

২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। তারা ইউক্রেনের বিদ্রোহীদের মদদ দিতে থাকে। আর এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে রাশিয়া। সিরিয়ার রক্তাক্ত যুদ্ধে আসাদ সরকারের পক্ষ নেয় রাশিয়া। রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ আছে।

কয়েক দিন আগে রাশিয়ার ভান্ডারে থাকা অত্যাধুনিক সব অস্ত্র থাকার কথা জানান। রীতিমতো হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের কথা শুনুন।’

বিকল্প নেই
নির্বাচনের আগে একাধিক জরিপে বলা হয়েছে, ৭০ শতাংশ ভোটার চান পুতিন ফিরে আসুন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্ট পার্টির পাভেল গ্রুদিনিন ৮ শতাংশের কম ভোট পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কালাশেভ বলেন, ‘পুতিন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জনগণের শঙ্কা ও সংশয় দূর করতে পেরেছেন। ১৯৯০-এর পর রাশিয়াজুড়ে এক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। মানুষ মনে করেছিল, তাদের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে।’

চার বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব শেষ করে ২০১২ সালে পুতিন ক্রেমলিনে ফিরেছিলেন। আগের চার বছর রাশিয়া অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে অতিবাহিত করেছে। জীবনযাত্রার মানও কমে যায় এ সময়।

তবে এরপর থেকে অবস্থার উন্নতি হয়। পুতিন পরিণত হন অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক নেতায়। বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনি নির্বাচন বয়কট করেছেন। তবে তিনি বলেন, ‘মানুষ বলছে, তারা ভালো আছে। আর এ জন্যই আমি পুতিনকে ভোট দেব। আর এ জন্যই তিনি ভোট পাবেন।’

পুতিনের সমর্থকদেরও একই কথা। অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক নিকিতা মিখালকভ বলেন, ‘আমাদের কমান্ডার-ইন-চিফ হবেন এমন পুতিন ছাড়া এমন কাউকে আমি দেখি না। তিনি একজনই। পুতিন আমাদের প্রেসিডেন্ট।’