পরীক্ষার্থীদের জন্য ছাড় দিল 'লাল স্রোত'

বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের জন্য মুম্বাইয়ে জড়ো হওয়া কৃষকদের একাংশ। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের জন্য মুম্বাইয়ে জড়ো হওয়া কৃষকদের একাংশ। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

বিক্ষোভকারীদের মাথায় ছিল লাল টুপি। এ জন্য মিছিলটাকে দেখাচ্ছিল লাল স্রোতের মতো। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের এই ‘লাল স্রোতের’ জোয়ার নামে রাতের বেলা। পরদিন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা। হাজারো মানুষের বিক্ষোভ মিছিল এসব পরীক্ষার্থীর যাত্রাপথে যাতে ব্যাঘাত না ঘটায়, এ জন্য কৃষকদের এই বিশাল বিক্ষোভের আয়োজন করা হয় রাতে।

ভারতের মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে গতকাল রোববার মধ্যরাতে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কমপক্ষে ৫০ হাজার কৃষক পাঁচ ঘণ্টা হেঁটে মিছিল নিয়ে জড়ো হন। কাল মঙ্গলবার বিধানসভা ঘেরাও করে বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থান থেকে সেখানে জড়ো হয়েছেন কৃষকেরা। আজ সোমবার এনডিটিভি অনলাইনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাদনাভিস দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে কর্মসূচির জন্য রাস্তায় যানজট সৃষ্টি না করার আহ্বান জানান কৃষকদের। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম যে পরীক্ষার দিন তাঁদের যানজট সৃষ্টি করা ঠিক হবে না। এতে এক লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী দুর্ভোগে পড়বে।’

বাম-সমর্থিত অল ইন্ডিয়া কিষান সভার (এআইকেএস) নেতৃত্বে গতকাল কৃষকেরা নাশিক থেকে ১৮০ কিলোমিটার হেঁটে মুম্বাইয়ে প্রবেশ করেন। কৃষকদের মিছিল ছিল শান্তিপূর্ণ এবং তা যান চলাচলে কোনো বাধা হয়নি।

আজাদ ময়দানে আসা কৃষকের একজন বলেন, তিনি বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পাননি। তাই বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আজ পরীক্ষার দিন কোনো অসুবিধা হোক তা তিনি চান না। ওই কৃষক বলেন, ‘আমি শিক্ষার গুরুত্ব বুঝি। আমাদের বিক্ষোভ শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের চলাচলের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না।’

আজাদ ময়দান থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সিওনের কেজে সোমাইয়া মাঠে অবস্থান নেওয়া কৃষকদের অপর একটি দল মধ্যরাতের কিছু পর ময়দানের দিকে রওনা দেয়। ময়দান থেকে বিধানসভার দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার। কাল বিধানসভা ঘেরাও করে বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ময়দানে জড়ো হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার কৃষক।

কৃষকদের দাবিদাওয়ার মধ্যে রয়েছে ঋণ মওকুফ, আদিবাসী কৃষকদের কাছে জমি হস্তান্তর ইত্যাদি। কৃষকেরা স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন চায়। ওই কমিটি কৃষকদের উৎপাদন ব্যয়ের দেড় গুণ পরিশোধ এবং উৎপাদনের ওপর একটি ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেছে।

বিরোধী দল কংগ্রেস, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি, রাজ ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা ও ক্ষমতাসীন জোটে থাকা শিবসেনা কৃষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরে গতকাল কৃষকদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে কৃষকেরা এতে সন্তুষ্ট নন। তাঁরা শিবসেনাকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, সরকারের প্রতিনিধি বিবেচনায় কথা বলতে চান।

দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ময়দানে যাওয়া জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী গিরিশ মহাজন বলেছেন, মহারাষ্ট্র সরকার মিছিল শুরুর পর থেকেই কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

সরকারের একটি সূত্র বলছে, আজাদ ময়দানের বাইরে কৃষকদের এগোতে দেওয়া হবে না। কৃষকদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদলকে বিধানসভায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হবে। অল ইন্ডিয়া কিষান সভা জানিয়েছে, সরকারের এ প্রস্তাবকে তারা বিবেচনা করে দেখবে।