বিজেপির জোট ছাড়ল টিডিপি, অনাস্থা প্রস্তাবও আনবে

দীর্ঘ টালবাহানার পর ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের শাসক দল তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ছাড়ল। শুধু জোট ত্যাগই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তারা লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে রাজ্যটির আরেক দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস। এই জোড়া অনাস্থায় নরেন্দ্র মোদির সরকারের পতনের কোনো আশঙ্কা না থাকলেও গত চার বছরে এই প্রথম অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বিরোধীদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হবে সরকারকে।

জোট ছাড়ার সলতে পাকানোর কাজ টিডিপি শুরু করেছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। রাজ্যভাগের পর অন্ধ্র প্রদেশকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা না দেওয়ায় ক্ষোভ জমছিল। টিডিপির মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর ওপর চাপ বাড়াচ্ছিল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস। সেই দলের নেতা জগমোহনকে রাজ্যে জমি ছেড়ে দিতে নারাজ চন্দ্রবাবু নাইডু গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নেন দুই মন্ত্রীকে। এরপর গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি জোট ছাড়ার কথা জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিশেষ অধিকারের মর্যাদা না দিয়ে রাজ্যকে কেন্দ্র অপমান করেছে। এই অপমানের পর জোটে থাকা সম্ভব নয়।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে তাঁরা অনাস্থা প্রস্তাব আনছেন।

টিডিপি অনাস্থা প্রস্তাব আনার আগেই ওয়াইএসআর কংগ্রেস সেই প্রস্তাব জমা দেয়। রাজ্যের রাজনীতিতে দুই দল বিপরীত মেরুর হলেও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের আনা অনাস্থাকে টিডিপি সমর্থন জানিয়ে নিজেরাও যে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেবে, তা জানিয়ে দেয়। নিয়ম অনুযায়ী অন্তত ৫০ জন সাংসদ প্রস্তাবের পক্ষে না থাকলে তা গৃহীত হয় না। টিডিপির অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন জানায় কংগ্রেস, এআইএডিএমকে, সিপিএম, আম আদমি পার্টিসহ আরও অনেক দল। তৃণমূল কংগ্রেস এখনো সমর্থন না জানালেও জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য চন্দ্রবাবু নাইডুকে অভিবাদন জানিয়েছে। অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণের আগেই গতকাল লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন সোমবার পর্যন্ত লোকসভার মুলতবি করেন। এর ফলে প্রস্তাব নিয়ে যা কিছু আলোচনা তা আগামী সপ্তাহেই হবে।

দক্ষিণের এই দুই দলের জোড়া আঘাতে মোদি সরকারের এমনিতে কোনো বিপদ নেই। লোকসভায় টিডিপির সদস্যসংখ্যা ১৬, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ৯। দুইয়ে মিলে ২৫। একযোগে বিরুদ্ধাচরণ করলেও সরকারের পতনের কোনো আশঙ্কা নেই। কিন্তু দেশজুড়ে জোটের শরিক এবং বিরোধী মহলে যেভাবে অসন্তোষ দানা বাঁধছে, তাতে আগামী বছর লোকসভা ভোট বিজেপির কাছে মোটেই মসৃণ হয়ে উঠবে না। এর ওপর উত্তর প্রদেশে দুই দল সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) একজোট হয়ে লড়ার সিদ্ধান্ত নিলে বিজেপিকে পড়তে হবে কঠিন পরীক্ষায়। এই দুই দলের সম্মিলিত শক্তির অর্থ কী হতে পারে, গোরক্ষপুর ও ফুলপুর লোকসভার উপনির্বাচন তার প্রমাণ দিয়েছে।

চার বছর আগে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি ও তার জোট উত্তর প্রদেশে ৮০ টির মধ্যে ৭৩টি আসন পেয়েছিল। ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি পেয়েছিল ৪০৩ টির মধ্যে ৩২৫টি আসন। ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এসপি ও বিএসপির প্রাপ্য ভোট যোগ করলে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি ৮০ লোকসভা আসনের মধ্যে মাত্র ২৩ টিতে এগিয়ে থাকছে। অখিলেশ-মায়াবতী এগিয়ে থাকছেন ৫৭ টিতে। গোরক্ষপুর ও ফুলপুরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই দুই দল ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জোট করলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কপালে ভাঁজ পড়তে দেরি হবে না।

টিডিপি জোট ছাড়ার পর বিজেপির মুখপাত্র নরসিংহ রাও বলেছেন, অন্ধ্র প্রদেশে বিজেপির বৃদ্ধির জন্য এই সিদ্ধান্ত সহায়ক হয়ে উঠবে। এক বছরের মধ্যেই ওই রাজ্যে বিজেপি প্রধান শক্তি হয়ে উঠবে।

বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএতে অসন্তুষ্টির সংখ্যা কিন্তু বাড়ছে। টিডিপি জোট ছাড়ল। সবচেয়ে পুরোনো শরিক শিবসেনা জোটে থেকেও প্রায় নিয়মিত বিজেপির বিরোধিতা করছে। এখনো জোট না ছাড়লেও তারা জানিয়েছে, আগামী দিনে রাজ্যে তারা একাই চলবে। দলের সাংসদেরা বলেছেন, অটল বিহারি বাজপেয়ির আমলে শরিকদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক হতো। গত চার বছরে যা একবারও হয়নি। বিজেপির ওপর অসন্তুষ্ট আকালি দলও।

হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও গুজরাটের মোট ১৮৪ লোকসভা আসনের মধ্যে গত ভোটে বিজেপি ও তার সঙ্গীরা পেয়েছিল ১৬৪ টি। এই রাজ্যগুলোতে আগামী বছর বিজেপিকে মোকাবিলা করতে হবে কংগ্রেসের সঙ্গে। ইতিমধ্যে উপনির্বাচনগুলো যে ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাতে স্পষ্ট যে আগামী বছর এই রাজ্যগুলোতে বিজেপিকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে। এই অবস্থায় বিজেপি বিরোধী জোটের পরিধি বাড়লে একার শক্তিতে দ্বিতীয়বার দেশ শাসনের ছাড়পত্র পাওয়া নরেন্দ্র মোদির পক্ষে নিশ্চিতভাবেই কঠিন।