মোদি ক্ষমতার নেশায় ছড়াচ্ছেন ঘৃণা ও বিদ্বেষ

দিল্লিতে কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশনে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, ইউপিএর চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ছবি: সংগৃহীত
দিল্লিতে কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশনে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, ইউপিএর চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ছবি: সংগৃহীত

ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরে বিজেপির বিদ্বেষের রাজনীতির মোকাবিলার ডাক দিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। পাশাপাশি একই মঞ্চ থেকে ইউপিএর চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী বললেন, কংগ্রেস মানুষের দল। মানুষের সুখ-দুঃখের অংশীদার। কংগ্রেস সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্বর তোলে। সবাইকে একজোট করে কংগ্রেসকেই প্রতিশোধমুক্ত ভারত গড়ে তুলতে হবে।

শনিবার ছিল দুই দিনব্যাপী কংগ্রেস প্লেনারি অধিবেশনের প্রথম দিন। সারা দেশ থেকে আসা কংগ্রেস প্রতিনিধিদের সামনে রাহুল-সোনিয়া ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনের সুর বেঁধে দিলেন অধিবেশনের প্রথম দিনেই।

রাহুল বললেন, ‘কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক। বিজেপি বিশ্বাস করে বিদ্বেষে, কংগ্রেসের শক্তি মানুষের ভালোবাসা। দেশজুড়ে বিদ্বেষের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ মানুষের সঙ্গে হানাহানি করছে। দেশ ক্লান্ত। মানুষ মুক্তি চাইছে। নতুন পথের সন্ধান করছে। কংগ্রেস সেই পথের সন্ধান দেবে।’

রাহুলের সংক্ষিপ্ত ভাষণের খানিক পর বলতে ওঠেন সোনিয়া। চড়া সুরে বিজেপিকে বিঁধে তিনি বলেন, ‘মোদি সরকার ক্ষমতার নেশায় বিভোর। দেশজুড়ে ঘৃণা ও দ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। স্বৈরতন্ত্রের ছোবলে দেশ জেরবার। কংগ্রেস কোনো দিন কোনো চ্যালেঞ্জের সামনে মাথা নোয়াননি। নোয়াবেও না। একজোট হয়ে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করবে।’

কংগ্রেস যে নিছকই এক রাজনৈতিক দল নয়, একটা দৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিনিধিদের সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সোনিয়া বলেন, সনাতন ভারতীয় মূল্যবোধগুলো কংগ্রেসই রক্ষা করে চলেছে। করবেও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্লোগান, ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ এবং দুর্নীতিরোধে ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব নাটকবাজি। মানুষের কাছে এই নাটক ধরা পড়ে গেছে। সোনিয়া আরও বলেন, ‘৪০ বছর আগে কর্নাটকের চিকমাগালুর থেকে ইন্দিরা গান্ধীর জয় কংগ্রেসকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিল। আমার বিশ্বাস, এবারও কর্নাটকের ভোট কংগ্রেসকে সেভাবেই গড়ে তুলবে।’

বস্তুত, এই ৮৪তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের মঞ্চ থেকেই লোকসভা নির্বাচনের সুরটা কংগ্রেস বেঁধে দিল। অধিবেশনে যে রাজনৈতিক প্রস্তাব শনিবার গৃহীত হয়, তাতে সমভাবাপন্ন দলগুলোর সঙ্গে ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে জোট গড়ার আগ্রহ দেখানো হয়েছে।

শনিবার শুরু হয় দুই দিনব্যাপী কংগ্রেস প্লেনারি অধিবেশন। সারা দেশ থেকে আসা কংগ্রেস প্রতিনিধিদের সঙ্গে সেখানে ছিলেন প্রিয়াংকা গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত
শনিবার শুরু হয় দুই দিনব্যাপী কংগ্রেস প্লেনারি অধিবেশন। সারা দেশ থেকে আসা কংগ্রেস প্রতিনিধিদের সঙ্গে সেখানে ছিলেন প্রিয়াংকা গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত

জোট বেঁধেই কংগ্রেস টানা ১০ বছর শাসন করেছে। সেই জোট (ইউপিএ) আরও জোরদার করার লক্ষ্যে সোনিয়া গান্ধী সক্রিয়। ইতিমধ্যেই তিনি এক নৈশভোজের আসরে সেই বার্তা দিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রস্তাবেও তা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কংগ্রেস বুঝিয়ে দিয়েছে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমএর ওপর তাদের ভরসা নেই। কোনো কোনো বিরোধী দল ইভিএমে কারচুপির যে অভিযোগ করে চলেছে, কংগ্রেস সেই অভিযোগকে মান্যতা দিল। রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন একই সঙ্গে করার যে উদ্যোগ বিজেপি নিয়েছে, তা অবাস্তব। বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতি ও বহু ধর্মের বহুত্ববাদী ভারতকে রক্ষা করাই যে কংগ্রেসের রাজনৈতিক ধর্ম, তা জানিয়ে রাহুল বলেছেন, কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক হাত। এই হাতই দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখবে। এগিয়ে চলার পথ দেখাবে।