কে কয় দিন ক্ষমতায় টিকবেন?

মোহাম্মদ বিন সালমান, কিম জং-উন, সি চিন পিং, ভ্লাদিমির পুতিন
মোহাম্মদ বিন সালমান, কিম জং-উন, সি চিন পিং, ভ্লাদিমির পুতিন

ক্ষমতা চিরদিন স্থায়ী হয় না—এ কথা সবাই জানেন। তবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ক্ষমতাধরেরা অনেক চেষ্টা করেন। বর্তমান বিশ্বে এমন কয়েকজন নেতা আছেন, যাঁরা প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে অনেক দিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র নির্ধারণে অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বিবেচনায় ধরলে যুক্তরাষ্ট্র তালিকার শীর্ষে। এরপরই চীন। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, শান্তি ঠিক রাখার মতো দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় কোন নেতা কত দিন টিকতে পারেন, তা আন্দাজ করা যায়।


বৈশ্বিক ঘটনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ১৬টি দেশ ও এর নেতাদের ক্ষমতা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে ব্লুমবার্গ। নেতাদের ভোটের মাধ্যমে পরাজয়ের আশঙ্কা, অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো বা ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে তাঁদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তালিকা করা হয়েছে। জেনে নিন তাঁদের সম্পর্কে:

মোহাম্মদ বিন সালমান
মোহাম্মদ বিন সালমান

মোহাম্মদ বিন সালমান, সৌদি আরব
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এখনো বাদশা হননি, তবে মাত্র ৩২ বছর বয়সেই তিনি সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কলকাঠি নাড়ছেন। ৫০ বছরের মতো ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেন তিনি। সংশয়বাদীরা পর্যন্ত বলেন, খুব কৌশলে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে নিজেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। বর্তমানে কয়েক দশক ধরে পুরোপুরি রাজতন্ত্র চালানোর মতো অবস্থানে আছেন। অবশ্য তিনি শত্রুও তৈরি করেছেন। যদি তিনি সুস্থ থাকেন এবং রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতিতে দেশ ও ওই অঞ্চলে সমর্থন পান, তবে ৫০ বছর বা তার বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে যেতে পারেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ পল সুলিভানের এটাই মত। তিনি বলেন, এটা খুব কমই ঘটে।

কিম জং-উন
কিম জং-উন

কিম জং-উন, উত্তর কোরিয়া
সামরিক অভ্যুত্থান, আততায়ীর হাতে খুন বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ কিম জং-উনের ক্ষমতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি। কিন্তু এগুলোর বাইরে তাঁরা বাবা ও দাদার মতো তিনি উত্তর কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণ কঠোরভাবে কয়েক দশের ধরে রাখতে পারবেন। কিমের বয়স এখন তিরিশের কোঠায়, তাই তিনি আরও তিন বা পাঁচ দশক সহজেই ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন। তবে তাঁর শরীরের ওজন বেড়ে যাচ্ছে। তাঁর বাবা কিম জং ইল ৭০ বছর বয়সে মারা যান এবং তাঁর দাদা কিম ইল সুং ৮২ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। জাপানের কোব বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সেবাসতিয়ান মাশলো বলেন, ‘কিম জং-উনের ক্ষমতার সঙ্গে নিকট ভবিষ্যতে টক্কর দেওয়ার মতো কাউকে দেখি না। যুক্তরাষ্ট্র বা দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষ সামরিক বাহিনী তাঁকে জোর করে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য না করলে উত্তর কোরিয়ার নেতা হিসেবে অনেক দিন কিম জং উনকে দেখা যাবে।’

সি চিন পিং
সি চিন পিং

সি চিন পিং, চীন
প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদ তুলে দিয়ে ‘আজীবন প্রেসিডেন্ট’ বিল পাস করেছে চীন। এর মধ্য দিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আজীবন প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকবেন। বলা হচ্ছে, তাঁকে আজীবন প্রেসিডেন্ট রাখার জন্যই এই বিলের প্রস্তাব তোলা হয়। এই বিল পাস করার মধ্য দিয়ে সি চিন পিং আজীবন প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকছেন। চীন ১৯৯০ সাল থেকে দুই মেয়াদ প্রেসিডেন্ট থাকার বিধান আরোপ করে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে সংবিধান থেকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মেয়াদব্যবস্থা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত সি চিন পিংয়ের মেয়াদ ছিল। সি চিন পিং তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতাকে দিনে দিনে আরও দৃঢ় করেছেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুংয়ের চেয়েও সি চিন পিংয়ের নাম ও রাজনৈতিক আদর্শকে সমুন্নত করতে তাঁর পক্ষে দল সমর্থনও দিয়েছে। ৬৪ বছর বয়সী সি আরও কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকবেন বলেই ধরা যায়। ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের চীন–বিষয়ক গবেষণা দলের প্রধান টম রেফারটি বলেন, সি দীর্ঘ মেয়াদে চীনকে নেতৃত্ব দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ঠিক করেছেন। বিশেষ করে ২০২০ সাল ও তার পরের দশক। আশা করা যায়, তিনি সুস্থ থাকবেন। তবে ঝুঁকি আছে। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা বা আন্তর্জাতিক বাধার মুখে তাঁর অবস্থান দুর্বল হলে অন্যজনের জন্য সুযোগ তৈরি হবে।

ভ্লাদিমির পুতিন
ভ্লাদিমির পুতিন

ভ্লাদিমির পুতিন, রাশিয়া
এবারের নির্বাচনে জিতলে চতুর্থ মেয়াদে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হবেন ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১২ সাল পর্যন্ত দুই দফায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। তখন প্রেসিডেন্টের মেয়াদ ছিল চার বছর করে। এরপর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে নেমে প্রধানমন্ত্রী হন পুতিন। দিমিত্রি মেদভেদেভ তখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে ওই এক মেয়াদেই। এরপর আবার প্রেসিডেন্টের পদে ফিরে যান পুতিন। তখনই আইনপ্রণেতাদের দিয়ে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ছয় বছর করান তিনি। এরই মধ্যে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শেষ করেছেন। এবার চতুর্থ মেয়াদের অপেক্ষা। আর তা হলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা সংহত থাকবে পুতিনের। কিন্তু তারপর?

১৮ বছরের শাসনামলে ভ্লাদিমির পুতিন সুকৌশলে তাঁর ক্ষমতার পথে অন্য বাধাগুলোকে নিষ্ক্রিয় করেছেন। ৮০ শতাংশ অনুমোদন রেটিং নিয়ে এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণের কারণে ৬৫ বছর বয়সী পুতিন আগামী ছয় বছরমেয়াদি আরেকটি নির্বাচন জিতে যেতে পারেন। তবে ২০২৪ সালের সাংবিধানিক বিধান তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে বাধ্য করবে। ওই সময় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মানতে হলে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে হবে পুতিনকে। কারণ, টানা তিনবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার নিয়ম নেই রাশিয়ায়। তখন পুতিনের হাতে বিকল্প থাকবে তিনটি। প্রথমত, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মতো আজীবন ক্ষমতায় থাকার বিধান আনতে পারেন। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী পদে এক মেয়াদ থেকে আবার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। তৃতীয়ত, একজন উত্তরসূরির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সাধারণ মানুষের জীবনে ফিরে আসতে পারেন। তবে ওই সব আইনকানুনকে তিনি ইতিমধ্যে পাশ কাটিয়েছেন। আর পলিটিকের রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্ট্যানোভায়া বলেন, পুতিন চলে গেলেও তাঁর প্রভাব বজায় রাখার জন্য ভেটো ক্ষমতা চান। এর জন্য তাঁকে একটি সিস্টেম তৈরি করতে হবে, যাতে ক্ষমতা থেকে সরে গেলেও তাঁর হাতে সব ক্ষমতা থাকে। দ্য টাইমসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০০০ সালের পর থেকে রাশিয়ায় নির্বাচনে আর জয়-পরাজয় নিয়ে ভাবা হয় না। তখন থেকে নির্বাচনের মূল লক্ষ্য হলো পুতিনের রাজত্বের ভিত আরও শক্ত করা। রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ দুটি সরকারি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, পুতিনের বিকল্প হিসেবে এখনো কারও কথা ভাবা হচ্ছে না।

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান
রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, তুরস্ক
২০১৯ সালের নির্বাচনে আবার যদি জিততে পারেন, তবে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রভাব আরও বাড়বে। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকার পর দেশটির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন তিনি। ৬৪ বছর বয়সী এরদোয়ান ২০১৬ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থান থেকে রক্ষা পেয়েছেন। তার পক্ষে ভোট ও কয়েকটি বিরোধী দলের সমর্থন রয়েছে। যদিও তাত্ত্বিকভাবে পাঁচ বছরমেয়াদি দুবার ক্ষমতায় থাকতে পারেন, তবে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হলে তিনি তা টেনে নিয়ে যাবেন। আঙ্কারাভিত্তিক তুরস্কের ইকোনমিক পলিসি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক নিহাত আলী ওজকান বলেন, এরদোয়ান রাজনৈতিক জোট করে আইন পরিবর্তন করে নির্বাচিত হতে চাইছেন। যদি নির্বাচিত হতে পারেন, তবে তাঁকে আগামী এক দশক ক্ষমতায় থাকতে দেখা যাবে।

নরেন্দ্র মোদি
নরেন্দ্র মোদি

নরেন্দ্র মোদি, ভারত
ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নরেন্দ্র মোদি আধিপত্য ধরে রেখেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে কারিশমা দেখাবেন তিনি। পাঁচ বছর মেয়াদে আবার ক্ষমতায় এলে ১৩০ কোটি মানুষের দেশটির শাসন ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাঁর হাতে থাকবে। এ সময়কাল আরও বাড়তে পারে। তবে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তাঁর দলের পর্যাপ্ত আসন নেই। ২০১৪ সাল ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁর দল রাজ্যগুলো বেশ কিছু নির্বাচন জিতেছে। ৬৭ বছর বয়সী মোদিকে ভারতের জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ মনে করা হয়। বিরোধী কংগ্রেস দল দুর্বল ও সেখানে ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব নেই। আঞ্চলিক দলগুলো বিজেপির অদম্য ইলেকশন মেশিনের কাছে দুর্বল। তার দলের নীতি জনগণের কাছে জনপ্রিয়। সিঙ্গাপুরভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্রোলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেশমি খুরানা বলেন, নিশ্চয়, এটা ভাবা যায় যে আঞ্চলিক নির্বাচনের সফলতার ভিত্তিতে ২০১৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসতে পারেন নরেন্দ্র মোদি। শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে এর সম্ভাবনা অনেক বেশি।

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি

আলী খামেনি, ইরান
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ১৯৮১ সালে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। তিনি আততায়ীর আক্রমণ, সম্মুখ যুদ্ধ, এমনকি প্রোস্টেট সার্জারি থেকেও বেঁচেছেন। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড ও অন্যান্য ধর্মীয় ও কর্মজীবী ইরানিদের মধ্যে তাঁর প্রভাব রয়েছে। ৭৮ বছর বয়সী আলী খামেনি আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকতে পারেন। ইরানের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলী ভায়েজ বলেন, তাঁর জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারেনি কেউ।

ইমানুয়েল মাখোঁ
ইমানুয়েল মাখোঁ

ইমানুয়েল মাখোঁ, ফ্রান্স
ফ্রান্সের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হন ইমানুয়েল মাখোঁ। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপ্রধান ও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রধান হিসেবে ২০২২ সালের আগ পর্যন্ত কোনো ভোটের মুখোমুখি হতে হবে না তাঁকে। ৪০ বছর বয়সী মাখোঁ নির্বাচিত হওয়ার পরপরই কিছু নীতিগত পরিবর্তন আনেন, যা অনেকের পছন্দ হয়নি। তবে তাঁর অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তগুলো যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, তবে ২০২২ সালেও উতরে যাবেন তিনি। আইফপস অপিনিয়ন সার্ভের প্রধান জেরম ফোরকোয়েট বলেন, দেশটির বামপন্থী ও ডানপন্থী বিভাজন বিলুপ্ত হয়নি। কিন্তু বিশাল কেন্দ্রীয় বাধার কারণে যে বিভাজন তৈরি করবে, এতে তারা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে।

নিকোলা মাদুরো
নিকোলা মাদুরো

নিকোলা মাদুরো, ভেনেজুয়েলা
মে মাসে নির্ধারিত নির্বাচন ঘিরে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো। তবে ৫৫ বছর বয়সী মাদুরোকে সমর্থন দিচ্ছে সেনাবাহিনী। প্রতিপক্ষকে বিভক্ত করে তাঁর দল আবার জয় পেলে ক্ষমতা আরও দুই দশক ধরে রাখতে পারবেন মাদুরো। সম্প্রতি সরকারি ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি সংবিধান পুনর্লিখন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের পাশ কাটানো পরের ছয় বছর নিশ্চিত করতে চান। কারাকাসের রাজনৈতিক বিশ্লেষক এডগার গুতিয়েরেজ বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে অস্থিতিশীল ক্ষমতায় আছেন মাদুরো। প্রতিপক্ষ যদি একজোট হতে পারে এবং ভোটের রাজনীতিতে জিততে পারে, তবে মাদুরোর দিন শেষ তা না হলে তিনি আরও অনেক দিন ক্ষমতায় টিকবেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদের প্রথম বছরে বেকারত্ব দূর হয়েছে অনেকটাই। কিন্তু এ সাফল্য ট্রাম্পের সমর্থন হিসেবে রূপান্তর করতে হবে। ৭১ বছর বয়সী ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে কম রেটিং পাচ্ছেন। এর আগে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ ও জিমি কার্টারের এত কম রেটিং ছিল। দুজনই পরাজিত হয়েছিলেন। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিশেষ কাউন্সেলের তদন্ত ট্রাম্পের জন্য ঝুঁকি। তবে ট্রাম্পকে অভিশংসন করতে হলে সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। নভেম্বরে ডেমোক্র্যাটরা জিতে এলেও তা অসম্ভব। ওয়াশিংটনে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির সরকারবিষয়ক অধ্যাপক জেনিফার ললেস বলেন, দেড় বছর ধরে অনেক মানুষ ভাবছে, এটাই বুঝি শেষ। যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে, এটা ঠিক নয়।

মুহাম্মাদু বুহারি
মুহাম্মাদু বুহারি

মুহাম্মাদু বুহারি, নাইজেরিয়া
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখবেন মুহাম্মদ বুহারি। সাবেক এ সামরিক শাসক অবশ্য পাঁচ মাসের বেশি সময় লন্ডনে চিকিৎসা নিয়েছেন। ৭৫ বছর বয়সী বুহারিকে অবশ্য উন্নত জীবনব্যবস্থা ও তেলনির্ভর অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। আগামী নির্বাচনের আগে জোট বেঁধে নির্বাচন করলে জয় নিশ্চিত করতে পারবেন। ইএক্সএক্স আফ্রিকা নামের রাজনৈতিক ঝুঁকিবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক রবার্ট ব্রেসেলিং বলেছেন, তাঁর সম্ভাবনা ব্যাপক। তবে চড়াই-উতরাই আছে।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইসরায়েল
দীর্ঘদিন ধরেই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ঘিরে অনেক বিতর্ক জড়িয়ে আছে। তবে দেশটির দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেন। ৬৮ বছর বয়সী নেতানিয়াহু পুলিশি তদন্ত থেকে বেঁচে গেছেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে আরেকবার চার বছরমেয়াদি নির্বাচনে জিতে যেতে পারেন তিনি। এরপর আরও দীর্ঘদিন নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থেকে যেতে পারেন বলেন মনে করেন জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইমেরিটাস অধ্যাপক আব্রাহাম ডিসকিন। অবশ্য অনেকেই তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চাইছেন, কিন্তু এখনো সময় আসেনি বলেই মত ডিসকিনের।

শিনজো আবে
শিনজো আবে

শিনজো আবে, জাপান
কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত ভাবা হচ্ছিল, সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় দলের নেতৃত্ব নির্বাচনে জিতে যাবেন শিনজো আবে। জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সেটি রেকর্ড হবে। তবে ভূমিচুক্তি-সংক্রান্ত একটি কেলেঙ্কারি তাঁর সম্ভাবনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৬৩ বছর বয়সী শিনজো অবশ্য তাঁর সব দোষ অস্বীকার করেছেন। ছয় বছর মেয়াদে এখনো পদ থেকে সরে যাওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেননি। টোকিওর চুয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিভেন রিড বলেন, দলের আরও একবার নেতৃত্ব দেবেন শিনজো। এটাই তাঁর শেষ নির্বাচন হতে পারে।

আঙ্গেলা ম্যার্কেল
আঙ্গেলা ম্যার্কেল

আঙ্গেলা ম্যার্কেল, জার্মানি
৬৩ বছর বয়সী আঙ্গেলা ম্যার্কেল জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে আরও চার বছর ক্ষমতায় থাকছেন। তবে আগের চেয়ে তিনি এখন দুর্বল হয়েছেন। তবে ১২ বছরের ক্ষমতায় থাকলেও তাঁকে হটানোর মতো কম মুখ চোখে পড়বে। শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করা নিয়ে ম্যার্কেল কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন। এ ছাড়া ভোটাররা নতুন মুখ চান। অনেকেই ধারণা করেন, ম্যার্কেল গোধূলিলগ্নে। তিনি চতুর্থ মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষমতা ছাড়তে পারেন। বার্লিনের হার্টি স্কুল অব গভর্নেন্সের প্রফেসর আন্দ্রে রোমেল বলেন, দলে তরুণ ও প্রতিভাবান নেতাদের কেউ তাঁকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।

থেরেসা মে
থেরেসা মে

থেরেসা মে, যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বিপদে আছেন। কেউ কেউ মনে করেন, ২০২২ সালের নির্বাচনে লড়বেন থেরেসা। ৬১ বছর বয়সী থেরেসা গত জুন মাসে একবার বিপদে পড়েছিলেন। গত জুন মাসে নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েন থেরেসা মে। আসন বাড়াতে গিয়ে উল্টো সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন থেরেসা মে। বিপরীতে বিরোধী দল লেবার পার্টিকে করে দিয়েছেন আরও শক্তিশালী। তবে লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকসের প্রভাষক নিক অ্যানেসটেড মনে করেন, থেরেসা মে বেশ ঝুঁকিতে আছেন। তবে তাঁর বড় শক্তি হলো তাঁকে হটানোর মতো দলে সুনির্দিষ্ট কোনো নেতা নেই, যিনি পুরো কনজারভেটিভ পার্টিকে একসূত্রে রাখতে পারেন।

মিশেল তেমের
মিশেল তেমের

মিশেল তেমের, ব্রাজিল
১৯৮৫ সালে ব্রাজিলে গণতন্ত্র আসার পর থেকে সবচেয়ে বয়স্ক ও কম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট মিশেল তামির। ক্ষমতায় থাকা ১৬ জনের তালিকায় তিনি সবচেয়ে কমদিন থাকতে পারবেন বলে ধারণা করা হয়। অক্টোবরের নির্বাচনে ৭৭ বছর বয়সী তেমের আর থাকছেন না বলে কয়েকবার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর সরকারের অধীনে দেশটির রেকর্ড মন্দাবস্থা থেকে অর্থনীতি ধীরে ধীরে ভালোর দিকে যাচ্ছে। তবে ব্রাজিলের বেশির ভাগ মানুষ এটিকে উন্নতি বলতে নারাজ। তেমেরের বেশ কিছু পদক্ষেপ জনপ্রিয় হয়নি।

ব্লুমবার্গ অবলম্বনে মো. মিন্টু হোসেন