সিঙ্গুর নিয়ে আবার মামলা

সিঙ্গুরে টাটার সেই ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানা। ফাইল ছবি।
সিঙ্গুরে টাটার সেই ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানা। ফাইল ছবি।

সিঙ্গুর নিয়ে আবার একটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। মানিক মণ্ডল নামের এক সমাজকর্মী মামলাটি করেছেন। মামলায় তিনি বলেছেন, সিঙ্গুরের জমি চাষিদের ফেরত দেওয়া হলেও সেই জমি চাষযোগ্য নয়। এই জমিকে চাষযোগ্য করে তা চাষিদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদনে মামলাটি করেছেন তিনি।

মানিক মণ্ডল তাঁর আবেদনে বলেছেন, এখনো ৩০০ একর জমি চিহ্নিত করা হয়নি। সেসব জমির মাটির তলে এখনো রড-বালু-সিমেন্টের স্থাপনা রয়েছে। রয়েছে কারখানার কাঠামো, রাস্তা ও জলাশয়। এ কারণে ওই সব জমি এখনো কৃষিযোগ্য করে তোলেনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। অথচ এই জমিকে চাষযোগ্য করার জন্য ইতিমধ্যে ২৫০ কোটি রুপি ব্যয় করেছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে জমির অবস্থা পর্যালোচনা করে জমি চাষযোগ্য কি না, এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টে পেশ করার আবেদন জানান মানিক মণ্ডল।

আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী শান্তিরঞ্জন দাস বলেছেন, সিঙ্গুর মামলার রায় দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, জমি ফেরত দেওয়ার আগে তা চাষযোগ্য করে দিতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ মানেনি। এ কারণে ১০ বছর পর কৃষকেরা জমি ফেরত পেলেও সেই জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না।

২০০৬ সালের জুন মাসে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীকে সস্তায় ন্যানো গাড়ির কারখানা তৈরির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৯৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে। এরপর টাটা গোষ্ঠী ওই জমিতে ন্যানো গাড়ির কারখানা নির্মাণের জন্য পাকা কাঠামো তৈরি করে। গাড়ির কারখানা চালুরও উদ্যোগ নেয়।

সিঙ্গুরে ভারতের টাটা গোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে জমি পেয়ে ন্যানো গাড়ির কারখানা নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করলে আপত্তি তোলেন মমতা। ওই সময় পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার ৯৯৭ একর জমি লিজ দিয়েছিল টাটা গোষ্ঠীকে।

২০০৬ সালে টাটার ন্যানো গাড়ির কারখানা নির্মাণ এবং জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন মমতা। বসেন ২৬ দিনের অনশন আন্দোলনে। ২০০৭ সালে গাড়ির কারখানা নির্মাণের জন্য বামফ্রন্ট সরকার জমি তুলে দেয় টাটার হাতে। ২০০৮ সালে সিঙ্গুরের কারখানার সামনে আন্দোলনে বসেন মমতা। টাটাকে দেওয়া ৯৯৭ একর জমির মধ্যে ৪০০ একর জমির মালিকেরা ওই জমি দিতে আপত্তি তোলেন। তাঁরা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা নিতেও অস্বীকার করেন। ফলে আন্দোলন তীব্র হয়। এ সময় মমতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, তৃণমূল ক্ষমতায় এলে অনিচ্ছুক কৃষকদের ৪০০ একর জমি ফিরিয়ে দেবে। ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে অবশ্য মমতা টাটাদের জমি অনিচ্ছুক কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আইন প্রণয়ন করেন।

এই আন্দোলনের মাঝে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে। ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওই জমি অধিগ্রহণ সঠিকভাবে হয়নি। তাই সুপ্রিম কোর্ট এই জমি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে এনে তা কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এই নির্দেশও দেওয়া হয়, প্রত্যেক জমিদাতাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ জমির মূল্যও ফেরত দিতে হবে।

সিঙ্গুর নিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলনের জেরে ২০১১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল ভোটে জিতে রাজ্যপাট থেকে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটায়। কিন্তু প্রথম পাঁচ বছরের শাসনামলে মমতা প্রতিশ্রুতিমতো সিঙ্গুরের জমি চাষিদের হাতে ফিরিয়ে দিতে পারেননি। দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে মমতা ফিরিয়ে দেন সিঙ্গুরের জমি চাষিদের হাতে।