রাজ্যসভার ভোট, উত্তর প্রদেশে বাজিমাত বিজেপির

উত্তর প্রদেশে লোকসভা উপনির্বাচনে হারের বদলা নিল বিজেপি। ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার ভোটে তারা টেক্কা দিল বিরোধী জোটকে। জিতল বাড়তি একটি আসন, সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) অভূতপূর্ব জোটকে টেক্কা দিয়ে। অন্যটিতে জয়ী হলেন এসপি প্রার্থী জয়া বচ্চন। দক্ষিণের কংগ্রেস–শাসিত রাজ্য কর্ণাটকে অবশ্য বিজেপির চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে কংগ্রেসও জিতল বাড়তি একটি আসন।

রাজ্যসভার দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে মোট আসন ছিল ৫৯। ৩৩টি আসনের প্রার্থীরা আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী। শুক্রবার ভোট হয় বাকি ২৬ আসনে। আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল বিজেপি–শাসিত উত্তর প্রদেশ ও কংগ্রেস–শাসিত কর্ণাটক। দুই রাজ্যে ভোট হয় যথাক্রমে ১০ ও ৪টি আসনে। এ ছাড়া ভোট হয় পশ্চিমবঙ্গের ৫, তেলেঙ্গানায় ৩, ঝাড়খন্ডে ২ এবং কেরল ও ছত্তিশগড়ে একটি করে আসনে।

উত্তেজনায় খই ফুটছিল উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটকে। উত্তর প্রদেশে ১০ আসনের মধ্যে ৮টিতে বিজেপির জয় নিয়ে সংশয় ছিল না। জিততে প্রয়োজন ৩৭টি ভোট। বিধানসভায় বিজেপির মোট আসনসংখ্যা ৩২৪। ফলে ৮টি আসনে ৮ জন প্রার্থীর জয় ছিল নিশ্চিত। ৮ জনকে ৩৭টি করে ভোট দেওয়ার পরেও বিজেপির কাছে উদ্বৃত্ত ছিল ২৮টি ভোট। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এই বাড়তি ভোট নিয়েই ফাটকা খেলেন। এসপি ও বিএসপি জোটকে হারাতে নবম আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি দাঁড় করান শিল্পপতি অনিল আগরওয়ালকে।

বিজেপির মোকাবিলায় ২৪ বছর পর হাতে হাত মিলিয়েছিলেন অখিলেশ সিং ও মায়াবতী। জোট বেঁধে তাঁরা ছিনিয়ে নেন বিজেপির জেতা গোরক্ষপুর ও ফুলপুর কেন্দ্র। বদলা নিতে অমিত শাহর ময়দানে নামা। টান টান উত্তেজনার পর অবশেষে জয় হয় তাঁরই।

লোকসভায় জেতার পর রাজ্যসভায় এসপির বাড়তি ভোট বিএসপিকে দিতে অখিলেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। বিধানসভায় এসপির মোট সদস্য ৪৭। ৩৭ ভোট জয়া বচ্চনকে দিয়েও এসপির বাড়তি ভোট ছিল ১০। বিএসপির নিজের সদস্য ১৯। পাটিগণিতের হিসাবে ১৯–এর সঙ্গে ১০ যোগ হলে মায়াবতীর প্রার্থীর জয়ের জন্য দরকার ছিল আরও ৮টি ভোট। কংগ্রেস তার ৭​ ভোট বিএসপি প্রার্থীকে দেয়। অজিত সিংও দেন তাঁর দলের একমাত্র ভোট। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না।

মায়াবতীর বিধায়ক অনিল​ কুমার সিং ভোট দেন বিজেপি প্রার্থীকে। এসপি ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সাবেক রাজ্যসভা সদস্য নরেশ আগরওয়ালের বিধায়ক পুত্র নিতিনও (এসপি) বিজেপিকে ভোট দেন। নির্দল প্রার্থী রঘুরাজ প্রতাপ সিং বলেন, তিনি অখিলেশের সঙ্গে আছেন, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে মায়াবতীর প্রার্থীকে ভোট দেবেন। এই ‘ক্রস ভোটিং’ বিজেপিকে বাড়তি আসনটি পাইয়ে দেয়।

কর্ণাটকের লড়াইও ছিল উত্তর প্রদেশের মতো টানটান। ভোট ছিল ৪ আসনে। জিততে প্রয়োজন ৪৭টি ভোট। কংগ্রেসের ১২৪ বিধায়কের জন্য দুই প্রার্থীর জয় ছিল নিশ্চিত। তাদের বাড়তি ভোট ছিল ৩২। বিজেপি ও জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) এক জোট হয়ে লড়েছে। দুটি আসন জিততে তাদের প্রয়োজন ছিল ৯৪ ভোট। কিন্তু জনতা দলের ৭ বিধায়ক কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেওয়ায় তৃতীয় আসনটিও জিতে নেয় কংগ্রেস।

উত্তর প্রদেশ থেকে জিতে রাজ্যসভায় আসছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও দলীয় মুখপাত্র জিভিএল নরসিংহ রাও। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থনে জিতেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে। লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যসভার এই ভোট দলীয় আনুগ​ত্য অস্বীকার করে ‘ক্রস ভোটিং’ ও অভূতপূর্ব জোট সমীকরণের অভিনব নিদর্শন হয়ে রইল।