ভূমিক্ষয়ে বিপদে ৩২০ কোটি মানুষ

ভূমি ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ছবি: আইপিবিইএসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
ভূমি ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ছবি: আইপিবিইএসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

মানুষের নানামুখী কর্মকাণ্ডের জন্য ভয়াবহ ভূমিধ্বংস বিশ্বের ৩২০ কোটি মানুষকে বিপদে ফেলেছে। এতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনকেও ত্বরান্বিত করছে এই ভূমিক্ষয়।

দ্য ইন্টারগভর্নমেন্টাল সায়েন্স-পলিসি প্ল্যাটফর্ম অন বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিস (আইপিবিইএস) নামের এক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আইপিবিইএস বিশ্বের ১২৯টি দেশের প্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোই এর সদস্য হতে পারে। এর পাশাপাশি বিশ্বের বেশ কিছু বেসরকারি সংগঠন এবং নাগরিক সংগঠন প্রতিষ্ঠানটির পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে। বিশ্বে এই প্রথম ভূমি নিয়ে এ ধরনের একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো। আজ মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমি ধ্বংস হওয়ার কারণে ব্যাপক হারে বেড়ে যাচ্ছে অভিবাসন, বাড়ছে বিরোধ।

ভূমি ধ্বংসের ফলে এখন জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার যে পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, তা ২০১০ সালে বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ‍প্রায় ১০ শতাংশ।

তিন বছর ধরে বিশ্বের ৪৫টি দেশের শতাধিক বিশেষজ্ঞ এই প্রতিবেদন তৈরি করেন।

আইপিবিইএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষিজমির পরিমাণ বৃদ্ধি, কৃষিজমি ও তৃণভূমির অটেকসই ব্যবস্থাপনার ফলেই ভূমিক্ষয় বা ধ্বংস ঘটছে। আর এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্বের জীববৈচিত্র্য। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা, সুপেয় পানি শোধন ও প্রয়োজনীয় জ্বালানির উৎসের। বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় এ পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

আইপিবিইএসের সমীক্ষার কো-চেয়ারপারসন রবার্ট স্কোলস বলেন, ‘পৃথিবীর ভূমির এই ক্ষয় ৩২০ কোটি মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থার জন্য জরুরি ভিত্তিতে এখন সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীর সকল প্রাণ এবং সমগ্র মানবপ্রজাতির অস্তিত্বের জন্যই এটি জরুরি।’

এই সমীক্ষার আরেক কো-চেয়ারপারসন লুকা মনটানারেলা বলেন, ‘বিশ্বের জলাভূমিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। ১৯০০ সালের পর থেকে ৫৪ শতাংশ জলাভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, নানাভাবে এই ভূমিধ্বংস হয়। এর মধ্যে আছে নানা কারণে ভূমি পরিত্যক্ত হওয়া, বন্য প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়া, মাটিক্ষয়, সুপেয় পানির আধার নষ্ট এবং বন উজাড়।

পৃথিবীর ভূমিক্ষয়ে কাদের ভূমিকা বেশি? প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর উচ্চ মাত্রার ভোগবাদিতা আবার উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর ভোগবাদিতা যুক্ত হয়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বের দেড় শ কোটি হেক্টর প্রাকৃতিক ভূমি কৃষিজমিতে পরিণত করা হয়েছে। এখন মাত্র ২৫ ভাগেরও কম ভূমি মানুষের কর্মকাণ্ডের বাইরে আছে। এখনকার ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে এর পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচে চলে আসবে।