শোক-শ্রদ্ধায় স্মরণ, তদন্ত দাবি

রাশিয়ার কেমেরোভো শহরের উইন্টার চেরি শপিং মলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গত রোববার। এতে অন্তত ৬৪ জন প্রাণ হারান। তাঁদের স্মরণেই বুধবার জাতীয় শোক পালন করে দেশটি। বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ নিহত ব্যক্তিদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানায়। ছবি: রয়টার্স
রাশিয়ার কেমেরোভো শহরের উইন্টার চেরি শপিং মলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গত রোববার। এতে অন্তত ৬৪ জন প্রাণ হারান। তাঁদের স্মরণেই বুধবার জাতীয় শোক পালন করে দেশটি। বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ নিহত ব্যক্তিদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানায়। ছবি: রয়টার্স

অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় আজ বুধবার জাতীয় শোক পালন করেছে রাশিয়া। দেশটির বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ নিহত ব্যক্তিদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি যাদের অবহেলায় এ ঘটনা ঘটেছে, তাদের বরখাস্ত করতে এবং ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তেরও দাবি করা হয়। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাসগুলোতে একই কর্মসূচি পালিত হয়।

গত রোববার সাইবেরিয়ার কেমেরোভো শহরের একটি শপিং মলে ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৬৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। এদের মধ্যে ৪১ জনই শিশু। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ওই ভবনের মালিক ও মলটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কোম্পানির প্রধানও রয়েছেন। উইন্টার চেরি নামের ওই মলটি ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে। এতে একাধিক সিনেমা হলো, রেস্তোরাঁ, বাষ্পস্নান, শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য ছোট চিড়িয়াখানাসহ বিনোদনের আরও নানা কিছু রয়েছে। শপিং মলটির সবচেয়ে ওপরের তলায় আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ঘটনার সময় অনেকে সিনেমা দেখছিলেন।

তদন্তকারী দল বলছে, অগ্নিকাণ্ডের সময় নিরাপত্তারক্ষী সতর্কবার্তার সংকেত বাজাতে ব্যর্থ হয়েছেন। পাশাপাশি ভবনটির জরুরি নির্গমন পথগুলো ও সিনেমা হলের দরজাগুলোও বন্ধ ছিল। তবে এখন পর্যন্ত আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো শিশুর কাছে সিগারেটের লাইটার ছিল। খেলার সময় এর থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

এর আগে গত মঙ্গলবার পুতিনবিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি মস্কো স্কয়ারে হতাহত ব্যক্তিদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেককে কেমেরোভোর আঞ্চলিক গভর্নর আমান তালিয়েভকে অপসারণের দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায়। অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৭ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা তালিয়েভ অগ্নিকাণ্ডের পরপর ঘটনাস্থলে যাননি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেননি।

তবে, গত মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটির পেছনে ‘অপরাধমূলক অবহেলা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এটি কোনো যুদ্ধ নয় অথবা খনিতে মিথেন গ্যাসের বিস্ফোরণও নয়। লোকজন, শিশুরা এখানে আয়েশ করতে আসে। আমরা হতাহত ব্যক্তিদের নিয়ে কথা বলছি। কী কারণে আমরা তাদের হারালাম? শুধু অপরাধমূলক অবহেলা ও অসতর্কতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।’ পুতিন ফোনে সেখানকার গভর্নরকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন।

রোববারের ওই ঘটনার পরপরই রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানে শত শত মানুষকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, এ বিক্ষোভ এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাঁরা এ ব্যর্থতার জন্য আঞ্চলিক সরকারকে দায়ী করছেন।

বলা হচ্ছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ায় এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।

রাজধানী মস্কো থেকে ২ হাজার ২০০ মাইল পূর্বে কেমেরোভো এলাকাটি রাশিয়ার অন্যতম কয়লা উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।

এর আগে রাশিয়ার কাজানে ২০১৫ সালের মার্চে শপিং মলে আগুন লাগার ঘটনায় ১১ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। ২০১৩ সালে দেশটিতে দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুটিই হাসপাতালে। এপ্রিল ও সেপ্টেম্বরে ঘটা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যথাক্রমে ৩৮ ও ৩৭ জনের মৃত্যু হয়।