ঘরে ঢুকে চোখে জল মালালার

ইসলামাবাদে রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন মালালা। ছবি: রয়টার্স
ইসলামাবাদে রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন মালালা। ছবি: রয়টার্স

ছয় বছর পর নিজ দেশে ফিরলেন মালালা ইউসুফজাই। সোয়াত উপত্যকার মিঙ্গোরায় নিজেদের বাড়িটিতে ঢুকেই চোখে জল আসে মালালার। বাড়িটির ঘরে ঘরে হাতড়ে বেড়ান পুরোনো দিনের গন্ধ। খুঁজে ফেরেন পুরোনো বন্ধুদের। জানতে চান এ বাড়ির চাচা, ও বাড়ির মামার খোঁজখবর।

২০১২ সালের ৯ অক্টোবর তালেবান জঙ্গিরা গুলিবিদ্ধ করে মালালাকে। এরপর এই প্রথম তাঁর দেশে ফেরা।

মিঙ্গোরাতে নিজেদের পুরোনো বাড়ি ও সেনাবাহিনী পরিচালিত ক্যাডেট কলেজ পরিদর্শন করেন মালালা ও তাঁর পরিবার।

বিভিন্ন সময়ে মালালা যে পদক ও সনদগুলো পেয়েছিলেন, সেগুলো যত্ন করে রাখা আছে শোকেসে। মিঙ্গোরা, সোয়াত উপত্যকা, পাকিস্তান, ৩১ মার্চ। ছবি: রয়টার্স
বিভিন্ন সময়ে মালালা যে পদক ও সনদগুলো পেয়েছিলেন, সেগুলো যত্ন করে রাখা আছে শোকেসে। মিঙ্গোরা, সোয়াত উপত্যকা, পাকিস্তান, ৩১ মার্চ। ছবি: রয়টার্স

মালালারা আগে যে বাড়িতে থাকতেন, সেখানেই এখন থাকেন ফরিদুল হক হাক্কানি। তিনি বিবিসিকে জানান, বাড়িতে ঢুকেই কাঁদতে থাকেন মালালা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। মালালার বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই বাড়িতে ঢুকেই উঠানে যান। মাটিতে চুমু খান। মুঠো করে মাটি তোলেন। চোখে ঘষেন।

মালালা আর তাঁর মা তোপাকাই ইউসুফজাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব প্রতিবেশীদের খোঁজ জানতে চান হাক্কানির কাছে।

চাচা হাক্কানির সঙ্গে বাড়ির এক ঘর থেকে আরেক ঘরে ঘুরে বেড়ান মালালা। ঘরগুলো কীভাবে সাজানো ছিল, তাঁরা কী করতেন, এসব বলতে থাকেন। যেন পুরোনো দিনগুলোকে খুঁজে ফেরেন। তবে নিরাপত্তাকর্মীদের উপস্থিতির কারণে সহজ হতে পারছিলেন না মালালা। তাই একপর্যায়ে চাচাকে বলেন, আবার যখন আসবেন, তখন সঙ্গে কোনো নিরাপত্তাকর্মী থাকবেন না।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসির কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করছেন মালালা ইউসুফজাই। ইসলামাবাদ, পাকিস্তান, ২৯ মার্চ। ছবি: রয়টার্স
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসির কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করছেন মালালা ইউসুফজাই। ইসলামাবাদ, পাকিস্তান, ২৯ মার্চ। ছবি: রয়টার্স

এরপর মালালা যান সেনাবাহিনী পরিচালিত কলেজে। সেখানে মালালার পুরোনো বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। মালালা দেখা করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।

গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহীদ খোকন আব্বাসির বাড়িতে সম্মাননা জানানো হয় মালালাকে। মালালার মনে হয়েছিল, তাঁর স্বপ্ন যেন সত্যি হয়ে যাচ্ছে।

স্বদেশে ফেরা উপলক্ষে গত শুক্রবার মালালাকে নিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে ডন পত্রিকাও।

তালেবান জঙ্গিরা গুলিবিদ্ধ করার পর মালালা যুক্তরাজ্যে ছিলেন। সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগে তাঁর। এরপর পরিবার নিয়ে মালালা বার্মিংহামে থাকতে শুরু করেন। এখন তিনি অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করছেন।

নারীশিক্ষায় ভূমিকা রাখার জন্য সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান মালালা।

বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে মালালা ইউসুফজাই। গুলিবাগ, পাকিস্তান, ৩১ মার্চ। ছবি: রয়টার্স
বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে মালালা ইউসুফজাই। গুলিবাগ, পাকিস্তান, ৩১ মার্চ। ছবি: রয়টার্স

শুক্রবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মালালা বলেন, পাকিস্তানের নদী, পাহাড়, সবকিছু তাঁর মনে পড়ে। এমনকি নোংরা রাস্তা, বাড়ির আশপাশের আবর্জনার কথা মনে করেও মন খারাপ হয়।

রয়টার্স জানিয়েছে, চার দিনের সফরের পরে মালালা তাঁর বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে গতকাল সোমবার লন্ডনে গেছেন।

সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে আসা ও সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মী থাকায় অনেকেই মালালার সফর নিয়ে সমালোচনা করছেন। তবে অনেকে এও বলছেন, তালেবান জঙ্গিদের হামলার ভয় এখনো রয়েছে। তাই নিরাপত্তাব্যবস্থা জরুরি। আবার অনেকে এও মনে করছেন, মালালার দেশে আসায় প্রমাণিত হয়, পাকিস্তানের নিরাপত্তাব্যবস্থা আগের চেয়ে ভালো।