স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে ধরা যুক্তরাজ্য

সের্গেই স্ক্রিপাল (বাঁয়ে) ও তাঁর মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপাল (ফাইল ছবি)
সের্গেই স্ক্রিপাল (বাঁয়ে) ও তাঁর মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপাল (ফাইল ছবি)

যুক্তরাজ্যের সামরিক গবেষণাগার (মিলিটারি ল্যাবরেটরি) পোর্টন ডাউন জানিয়েছে, যে রাসায়নিক দিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রিত সাবেক রুশ গোয়েন্দা এবং তাঁর মেয়েকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে, সেটির উৎস সম্পর্কে তারা কিছু জানে না। অথচ ওই রাসায়নিক রাশিয়ার তৈরি দাবি করে এত দিন তুলকালাম করল যুক্তরাজ্য। এখন দেশটির সামরিক গবেষণাগারের আনুষ্ঠানিক বিবৃতির পর ‍প্রশ্নবিদ্ধ হলো যুক্তরাজ্যের অবস্থান।

রাশিয়া শুরু থেকে এ ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যৌথভাবে ঘটনাটি তদন্তের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। সর্বশেষ রাসায়নিক অস্ত্র বিষয়ে নজরদারি করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিভিশন অব কেমিক্যাল ওয়েপন’–এর (ওপিসিডব্লিউ) মাধ্যমে যুক্তরাজ্যকে বৈঠকে ডাকে রাশিয়া।

বুধবার জার্মানির হেগে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে যুক্তরাজ্যের কাছে রাশিয়ার সম্পৃক্ততার কী প্রমাণ আছে, সেটি জানতে চায়। আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয় যৌথ তদন্তের। কিন্তু রাশিয়ার প্রস্তাবকে যুক্তরাজ্য ‘দুর্বৃত্তসুলভ আচরণ’ আখ্যা দিয়ে নাকচ করে দেয়। ফলে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাজ্য এবং মিত্রশক্তির তিক্ততার রেশ আরও বহুদূর গড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত ৪ মার্চ যুক্তরাজ্যের সলসব্যারি শহরে একটি রেস্তোরাঁর বাইরে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তাঁর মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপালকে। পরে জানা যায়, তাঁরা বিষাক্ত রাসায়নিকে আক্রান্ত। সের্গেই স্ক্রিপাল রাশিয়ার গোয়েন্দা ছিলেন। যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাদের কাছে রাশিয়ার গোপন তথ্য বিক্রি করে দিয়ে নিজ দেশের সঙ্গে প্রতারণা করেন তিনি। দ্বৈত প্রতিনিধি (ডাবল অ্যাজেন্ট) হিসেবে কাজ করার দায়ে ২০০৬ সালে রাশিয়ায় তাঁর সাজা হয়। পরে ২০১০ সালে গোয়েন্দা বিনিময়ের মাধ্যমে ছাড়া পেয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেন সের্গেই স্ক্রিপাল।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা নিশ্চিত হয়েছেন, যে রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে, সেটির নাম ‘নোভিচক’। এটা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) গবেষণাগারে তৈরি। তিনি রাশিয়াকে সাবেক গোয়েন্দা হত্যাচেষ্টার জন্য দায়ী করেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন আরেক ধাপ এগিয়ে বলেন, তদন্তকারী গবেষকেরা তাঁকে শতভাগ নিশ্চিত করেছেন, ওই রাসায়নিক রাশিয়ার তৈরি।

এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের সামরিক গবেষণাগার পোর্টন ডাউনের প্রধান নির্বাহী গ্যারি অ্যাটকেনহেড গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘তাঁরা নিশ্চিত করেছেন যে ওই রাসায়নিক নোভিচক।’ তিনি বলেছেন, ‘হত্যাচেষ্টাকারীর কাছে কোন রাষ্ট্র ওই রাসায়নিক সরবরাহ করে থাকতে পারে, এর উৎস কোথায় বা কোন গবেষণাগারে তৈরি হয়েছে, সেটি নির্ধারণ করা তাঁদের কাজ নয়।’

অথচ ওই রাসায়নিক রাশিয়ার তৈরি অভিযোগ তুলে যুক্তরাজ্য এবং এর মিত্রদেশগুলো ১৩০ জনের বেশি রাশিয়ান কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। জবাবে রাশিয়াও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সমানসংখ্যক কূটনীতিক বহিষ্কার করে।

এখন যুক্তরাজ্যে বলছে, কেবল পোর্টন ডাউনের তদন্তকারীরা নন, অন্য আরও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রাশিয়াকে দোষারোপ করা হয়েছে।

রাশিয়ার বিদেশ বিভাগীয় গোয়েন্দাপ্রধান সের্গেই নারিস্কিন রাসায়নিক প্রয়োগের ঘটনাকে চরম উসকানিমূলক আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘রাশিয়াকে অপবাদে কোণঠাসা করতে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি সাজিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন এটা বলাই শ্রেয় যে স্নায়ুযুদ্ধের অন্ধকার সময় আবার ফিরে এসেছে।’