জার্মানির গাড়ি হামলাকারী বিকারগ্রস্ত ছিলেন

জার্মানির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মুনস্টার শহরে পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দিলে নিহত হয় তিনজন। হামলার পর বিধ্বস্ত জায়গাটি। ছবি: সংগৃহীত
জার্মানির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মুনস্টার শহরে পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দিলে নিহত হয় তিনজন। হামলার পর বিধ্বস্ত জায়গাটি। ছবি: সংগৃহীত

জার্মানির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মুনস্টার শহরে গতকাল শনিবার রেস্তোরাঁর বাইরে বসে থাকা লোকজনের ওপর গাড়ি তুলে দেওয়ার ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, এটি কোনো সন্ত্রাসী হামলা নয়। হামলাকারী ইয়েনস একজন বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি ছিলেন।

গতকালের ঘটনায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। এঁদের মধ্য অন্তত ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নর্থ রাইন ভেস্টফালেন রাজ্যের মুনস্টার শহরের কেন্দ্রে শনিবার ছুটির দিনে স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে তিনটায় কিপেনক্রেল সৌধের কাছেই গ্রোসে কিপেনক্রেল রেস্তোরাঁর বাইরে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, ৪৮ বছর বয়স্ক একজন জার্মানি নাগরিক ধূসর রঙের ভক্স ওয়াগন কোম্পানির একটি ক্যাম্পিং (ছুটি কাটানোর) গাড়ি নিয়ে জনবহুল রেস্তোরাঁর বাইরে বসে থাকা লোকজনের ওপর দ্রুত গতিতে চালিয়ে দেন। ঘটনার পরপরই গাড়িচালক ইয়েনস পিস্তল দিয়ে গাড়ির ভেতরে বসেই আত্মহত্যা করেন।

এ ঘটনার পর জার্মানির সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনী জিএসজি ৯ ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে এবং শহরটির আকাশে পুলিশের একাধিক হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যায়।

ঘটনাস্থলের দুই কিলোমিটার দূরেই পুলিশ হামলাকারী ইয়েনস আরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিস্ফোরক-জাতীয় সামগ্রী খুঁজে পায়। সায়ারল্যান্ড অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী এই হামলাকারী দীর্ঘদিন ধরে তিন লাখ মানুষ-অধ্যুষিত মুনস্টার শহরে বসবাস করতেন।

২০১৬ সালে তিউনিসিয়ান একজন শরণার্থী আনিস আমরি জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ক্রিসমাসের মার্কেটে জনতার ভিড়ের মধ্যে একটি ট্রাক তুলে দেন। ওই ঘটনায় ১২ জন নিহত হন। হামলার পর ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী হামলার কথা জার্মানিজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারী আনিস আমরির সঙ্গে ইসলামি জঙ্গিদের সম্পর্ক ছিল।

গতকালের হামলার চার ঘণ্টা পরেই পুলিশ হামলাকারী ইয়েনস আরের পরিচয় প্রকাশ করে। পুলিশ জানিয়েছে, এই হামলাকারী জঙ্গি বা সন্ত্রাসী—এই ধরনের কোনো প্রমাণ নেই। তবে আগেও তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।

হামলাকারী ইয়েনস আর একজন ডিজাইনার ছিলেন। বেশ কিছুদিন পূর্ব জার্মানিতে কাটিয়ে তিনি আবার কিছুদিন আগে মুনস্টার শহরে ফিরে আসেন। কিছুদিন থেকে বেকার জীবনযাপনকারী এই হামলাকারী হতাশাগ্রস্ত জীবন কাটাচ্ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে এই হতাশার বাইরে এই হামলার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তা দেখতে পুলিশ তদন্ত করছে।

নর্থ রাইন ভেস্টফালেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেবার্ট রয়েল বলেছেন, এই হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সবখানে যেভাবে শরণার্থীদের কাজ বলে ধারণা পোষণ করা হচ্ছে, তাও সঠিক নয়। আজকের হামলার ঘটনাটি ঘটিয়েছেন জার্মানির একজন নাগরিক।

জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল মুনস্টার শহরের এই হামলায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের জন্য গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।