সিরিয়ায় হামলার পক্ষে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ছবি: রয়টার্স

সিরিয়ার হামলার পক্ষে মত দিয়েছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা।

গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে জানান, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের ভবিষ্যৎ ব্যবহার ঠেকাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তাঁর সরকার একমত। এ বিষয়ে মিত্রদেশগুলোর যেকোনো পদক্ষেপে ভূমিকা রাখবে যুক্তরাজ্য।

বিরোধী দল লেবার পার্টি ও সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন এমপি সিরিয়ায় হামলার বিষয়ে সংসদে ভোটাভুটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান।

লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেন, ‘আরও বোমা হামলার অর্থ হবে আরও মানুষ হত্যা। যুদ্ধের প্রসার মানুষের জীবন বাঁচাবে না। এটা আরও মানুষের জীবন কেড়ে নেবে। চলমান সংঘাতকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাবে।’

আজীবন যুদ্ধবিরোধী করবিন বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান দেখতে চান তিনি। সবশেষ বিকল্প হিসেবেই কেবল হামলার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে বলে তাঁর মত। ইরাক ও লিবিয়া আক্রমণের অভিজ্ঞতা স্মরণে রাখার আহ্বান জানান তিনি।

ইস্টার ছুটির কারণে যুক্তরাজ্যে সংসদ অধিবেশন এখন বন্ধ। সোমবার থেকে শুরু হবে অধিবেশন। এই ছুটির মধ্যেই সিরিয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রীদের জরুরি তলব করেন মে।

২০১৩ সালেও সিরিয়ায় রাসায়নিক গ্যাস হামলার ঘটনা ঘটে। তখন মিত্রবাহিনীর সঙ্গে সিরিয়া হামলায় যোগ দিতে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সংসদে প্রস্তাব তুলেছিলেন। এমপিদের ভোটে সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। ওই অভিজ্ঞতা থেকে থেরেসা মে এবার সংসদের অনুমোদন না চেয়েই হামলায় যোগ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিরিয়ায় বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত দুমায় রাসায়নিক গ্যাস হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করছে পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো। তারা এই হামলার জন্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তাঁর সমর্থক রাশিয়াকে দায়ী করছে।

রাশিয়া বলছে, রাসায়নিক হামলার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। সিরিয়ায় হামলা চালানোর অজুহাত হিসেবে এই ঘটনা সাজানো হয়েছে।

দুমার ঘটনা নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ হয়। সিরিয়ায় যেকোনো হামলা ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া।

এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ায় হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এই হামলা মোকাবিলায় রাশিয়াকে প্রস্তুত থাকার চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ দাবি করেছেন, বাশার আল–আসাদের বাহিনী যে দুমায় রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে, এ বিষয়ে তাঁর দেশের কাছে প্রমাণ আছে।

যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স হামলার জন্য প্রস্তুত। তবে হামলার সম্ভাব্য কৌশল নির্ধারণ এবং সিরিয়ার পক্ষে রাশিয়া দাঁড়িয়ে গেলে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, এসব বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করতে একটু সময় লাগছে।

সিরিয়া সরকারের পক্ষে আছে রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। তাই দেশটিতে পশ্চিমা মিত্রদের হামলা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা।

বিবিসির খবরে বলা হয়, রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত এড়াতে চায় পশ্চিমা মিত্রবাহিনী। এ কারণে তারা সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর ঘাঁটিগুলো এড়িয়ে চলবে। কেবল সিরিয়ান সামরিক ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালাবে। এতে রাশিয়া পশ্চিমা মিত্র জোটের সঙ্গে সংঘাতে না-ও জড়াতে পারে। কারণ, ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের ঘাঁটিতে প্রায়ই বিমান হামলা চালায়। কিন্তু রাশিয়া এতে কখনো বাধা দেয়নি।

বিবিসির খবরে জানানো হয়, সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় আসাদ বাহিনী তাদের ঘাঁটি থেকে সেনা ও সরঞ্জাম সরিয়ে রাশিয়ান ঘাঁটিগুলোর কাছে রাখছে। কিছু বিমান ইরানে নিয়ে রাখা হচ্ছে। রাজধানী দামেস্ক রক্ষায় সামর্থ্যের সবটুকু নিয়োজিত করছে আসাদ বাহিনী। তবে এসব খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

যুক্তরাজ্যে আশ্রিত সাবেক দ্বৈত চর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপালের ওপর সাম্প্রতিক রাসায়নিক হামলার ঘটনায় রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর সম্পর্ক নতুন করে অবনতি হয়। এই হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে আসছে ‍যুক্তরাজ্য। রাশিয়া অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা উল্টো দাবি করে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে (ব্রেক্সিট) সৃষ্ট সংকট থেকে দৃষ্টি ফেরাতে ব্রিটিশরা এই ঘটনা সাজিয়েছে। এ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের মাসখানেক ধরে তুমুল উত্তেজনা চলছে।

অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ হাজিরের চ্যালেঞ্জ জানায় রাশিয়া। যুক্তরাজ্য কোনো প্রমাণ আজও দেয়নি। উল্টো প্রশ্নবিদ্ধ হয় যুক্তরাজ্যের অবস্থান। এ নিয়ে রাশিয়ার তরফ থেকে আরও চাপে পড়ে যুক্তরাজ্য। এরপর গত সপ্তাহে হুট করে সামনে আসে সিরিয়ায় রাসায়নিক গ্যাস হামলার খবর।

যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স সিরিয়ায় হামলা চালালে তাতে যুক্তরাজ্যও যোগ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে এই দুই মিত্র দেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে, যা ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পথে যুক্তরাজ্যের জন্য সহায়ক হবে।