অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে?

ম্যালকম টার্নবুল ও টনি অ্যাবট। ছবি: এএফপি ও রয়টার্স
ম্যালকম টার্নবুল ও টনি অ্যাবট। ছবি: এএফপি ও রয়টার্স

বাংলাদেশের মতো অস্ট্রেলিয়াতেও নির্বাচনী বছর এটি। সরকারি কিংবা বিরোধী—সব দলেরই কর্মসূচি এখন নির্বাচনমুখী। সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী দলের চেয়ে সরকারি দলেই কলহ বেশি দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিদিন গণমাধ্যমে থাকছে চটকদার বিশ্লেষণ। অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী নির্বাচনে লেবার নাকি লিবারেল পার্টি জয়লাভ করবে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের ধারাবাহিকতায় বিরোধী দল লেবার পার্টি কিছুটা এগিয়ে, এমনটিই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার সরকারি দল ফের ক্ষমতায় এলে কে হবেন অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী—তা নিয়েও বিশ্লেষণের শেষ নেই।

রাষ্ট্রীয় ও দলীয় নানা বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা চলছে অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান সরকারি দল লিবারেল পার্টিতে। পরবর্তী সরকারপ্রধান কে হতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের মধ্যকার লড়াই চলছে দলটিতে। ২০১৫ সালে অ্যাবটকে দেওয়া টার্নবুলের নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জটি আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাচনী ফলাফলের ক্ষেত্রে নিউজপুল নামের প্রায় নির্ভুল পূর্বাভাসের একটি পদ্ধতি রয়েছে। এরই মধ্যে দলটির নিজস্ব সংসদ সদস্যদের দ্বারা সরকারপ্রধান নির্বাচনে ৩০টি নিউজপুল খুইয়েছেন টার্নবুল। সেদিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও একে একে সমর্থক হারাচ্ছেন অ্যাবট। এর মধ্যে রয়েছে দেশটির প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও ২৫তম সাবেক জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড ও তাঁর সমর্থক লোকদের কিঞ্চিৎ বিপরীত অবস্থান। বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ানরা কী চায়, সেটা নাকি খুব ভালোই বোঝেন হাওয়ার্ড। সব মিলিয়ে এখন দলে টার্নবুল ও অ্যাবটের অবস্থান সমানে সমান হলেও জন হাওয়ার্ডের কারণে কিছুটা হেলে আছেন অ্যাবট।

কয়েকটি কাজের জন্য জনমনে সমর্থন রয়েছে টনি অ্যাবটের। এর মধ্যে অন্যতম বিষয় হলো দেশটিতে সমকামী বিবাহ বৈধ করার পেছনে তাঁর সমর্থন। গত বছর দেশটিতে এটি বৈধ হওয়ার পর অ্যাবটের সমর্থকসংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি অভিবাসন দেশ হিসেবে-খ্যাত অস্ট্রেলিয়ায় যখন ম্যালকম টার্নবুল নাগরিকত্ব প্রদানের আইনে কঠোরতা এনেছিলেন, তখনো অ্যাবট কিছুটা বিরোধিতা করেছিলেন। এতে অভিবাসীদের মনেও নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন তিনি। তবে বিপত্তি ঘটে অ্যাবটের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। কোনো দলীয় কিংবা জাতীয় সমস্যায় সবাইকে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ফলে নিজের সহকর্মীদের কাছেই বিশ্বাস হারিয়েছেন অ্যাবট।

অন্যদিকে দলীয় সমর্থন অনেকটা নিজের দিকেই আটকে রেখেছেন ম্যালকম টার্নবুল। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডটন ও কোষাধ্যক্ষ স্কট মরিসনসহ মন্ত্রিপরিষদের অনেকেই টার্নবুলের পক্ষে রয়েছেন। সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী বার্নাবি জয়েস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘টার্নবুল নির্বোধ নন, কখন কী করতে হবে, তিনি সেটা ভালোই জানেন।’

এদিকে গত রোববার ‘প্রধানমন্ত্রিত্ব দেওয়া হলে কী করবেন’ এমন এক প্রশ্নের জবাবে কোষাধ্যক্ষ মরিসন বলেন, টার্নবুল প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নয়, কেননা শুধু সরকারপ্রধান হিসেবে নয়, দলের প্রধান হিসেবেও তিনিই যোগ্য। একই প্রশ্নের জবাবে পিটার ডটন বলেন, ‘আমি মনে করি সুযোগ আসতে পারে। কিন্তু আমার জন্য আনুগত্যই গুরুত্বপূর্ণ, যা আমার আছে।’ এদিকে জুলি বিশপ বলেছেন, ‘এমন পরিস্থিতি প্রত্যাশাই করি না।’ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের এমন বক্তব্য টার্নবুলের প্রতি তাঁদের সমর্থনকেই ইঙ্গিত করে।

রাজনৈতিক দলগুলোতে যেকোনো সময়ই সমর্থন পাল্টে যেতে পারে। যেমনটা ঘটেছিল এবং ঘটছে টনি অ্যাবটের সঙ্গে। লিবারেল পার্টি যদি পরবর্তী নির্বাচনে জয়লাভ করে, তবে বেশির ভাগ মানুষই টার্নবুলকে পরবর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে দেখতে চায়। আর তাই নিজের প্রধানমন্ত্রিত্ব ধরে রাখতে হলে এ বছরের শেষ অবধি দলীয় সহকর্মীদের মন জুগিয়ে চলতে হবে টার্নবুলকে। নয় তো বা তীরে এসে টার্নবুলের তরি ডুবতে পারে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।