পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে মমতা ও সিদ্দিকুল্লাহর দ্বন্দ্ব

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম শরিক ছিল পশ্চিমবঙ্গের জামায়াতে উলেমায়ে হিন্দ। দলের প্রধান সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তৃণমূলের সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাত করেন। তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হন পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট বিধানসভা আসনে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি ২০১৬ সালের ১৬ মে রাজ্যের জনশিক্ষা প্রসার এবং গ্রন্থাগারবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সেই থেকে মমতার সঙ্গে জোট বেঁধে মন্ত্রিসভায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সিদ্দিকুল্লাহ।

কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে। সিদ্দিকুল্লাহর এলাকা মঙ্গলকোট ও কাটোয়ায় তাঁর দলের কাউকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনো টিকিট না দেওয়ায় খেপে গেছেন তিনি। দাবি অগ্রাহ্য করে প্রতিপক্ষকে টিকিট দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সিদ্দিকুল্লাহ তাঁর জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি গাড়ি ও নিরাপত্তাকর্মী ছেড়ে প্রতিবাদের জন্য মাঠে নেমেছেন।

সিদ্দিকুল্লাহর দল জামায়াতে উলেমায়ে হিন্দ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে একটি চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল রোববার দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে এ কথাও বলা হয়, দল এমন ভূমিকা নেবে না, যাতে বিজেপি সুবিধা পায়। ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে সমুন্নত রেখে দল যেভাবে চলছে, সেভাবে ভবিষ্যতেও চলবে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সুবিচার চায় তারা।

গতকালের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, জামায়াতে উলেমার একটি প্রতিনিধিদল তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে বিজেপি, বাম দল ও কংগ্রেসের দায়ের করা মামলা শুনানির জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য রয়েছে।

হাইকোর্টে আজকের শুনানির পর স্পষ্ট হয়ে যাবে—নির্দিষ্ট সময়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে কি না? অথবা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য বিরোধী দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়ানো হবে কি না?

বিজেপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের একক বেঞ্চ পঞ্চায়েত নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১৬ এপ্রিল শুনানির তারিখ রাখেন আদালত। এই আদেশের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি গ্রহণের আবেদন জানায়। এই আবেদনের ওপর আজ বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হবে।

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২ এপ্রিল। শেষ হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমার দিন থেকে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যব্যাপী সহিংসতার আশ্রয় নেয় বলে অভিযোগ ওঠে।

বিরোধী দলের অভিযোগ, তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা, মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা, মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি, মারপিট, বোমা হামলা, অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা হয়েছে। আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে বিরোধী দলকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। ফলে বিরোধী দলের অনেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিং ৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় এক দিন বাড়িয়ে দেন। কিন্তু রাজ্যের সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীদের চাপে পরের দিন সকালেই নির্বাচন কমিশনার আরেকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য এক দিন বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল করা হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিজেপি সুপ্রিম কোর্টে যায়। একই দাবি নিয়ে আদালতে যায় ১৭টি বাম দল ও কংগ্রেস।

সুপ্রিম কোর্ট শুনানি শেষে গত বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে আবেদনকারীদের কলকাতা হাইকোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার মামলা ওঠে কলকাতা হাইকোর্টে। মামলায় বিচারপতি নির্বাচনী কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে ১৬ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

আগামী ১, ৩ ও ৫ মে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা। উদ্ভূত পরিস্থিতে যথাসময়ে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। আগামী ১ মে বিশ্বজুড়ে মে দিবস পালিত হয়। সেদিন কীভাবে ভোট হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। অবশ্য এই তারিখটি পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছে। তারা বলেছে, দাবি মানা না হলে ১ মের অনুষ্ঠান তারা নির্বাচন কমিশনের সামনেই ঘটা করে পালন করবে।

যদিও বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিকালে হাইকোর্টের বিচারপতি এই ইঙ্গিত দেন যে প্রয়োজনে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন হতে পারে; তাই সময়মতো নির্বাচন হওয়া নিয়ে ইতিমধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।

এবার রাজ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৮ হাজার ৬৫০টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ২১৭টি আসন এবং জেলা পরিষদের ৮২৫টি আসনে নির্বাচন হবে।