সিরিয়ায় হামলা নিয়ে পার্লামেন্টে তোপের মুখে মে

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ছবি: রয়টার্স

পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়াই সিরিয়ায় হামলা চালানোর কারণে এমপিদের তোপের মুখে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা এ হামলাকে বেআইনি বলে অভিহিত করেন। একাধিক এমপি বলেন, এই হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে গভীরভাবে যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন ছিল। প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতে যাতে এককভাবে হামলার সিদ্ধান্ত না নিতে পারেন, সে জন্য ‘সমর ক্ষমতা আইন’ (ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্ট) প্রণয়নের দাবিও উঠেছে।

সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বরাবরই হামলার সিদ্ধান্তকে বৈধ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের স্বার্থেই মিত্রদের সঙ্গে সিরিয়া হামলায় যোগ দিয়েছেন তিনি।

ইস্টার ছুটির পর গতকাল সোমবার পার্লামেন্টে ফেরেন এমপিরা। সিরিয়ায় হামলার আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি নিয়ে তুমুল বিতর্ক রয়েছে দেশটির রাজনৈতিক মহলে। গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে স্পিকার জন বার্কো প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ বিষয়ে বিতর্কের জন্য দুদিন বরাদ্দ দেন। গতকাল বৈকালিক অধিবেশনে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলে বিতর্ক। আজ মঙ্গলবার এমপিদের মতামতের জন্য ‘ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্ট’ প্রণয়নের প্রস্তাব তুলবে লেবার পার্টি। তবে হামলার সিদ্ধান্ত বৈধ ছিল কি না, সে বিষয়ে কোনো ভোটাভুটি না হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের দখলে থাকা পূর্ব গৌতার দুমা এলাকায় নিষিদ্ধ রাসায়নিক গ্যাস হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা এই হামলার জন্য সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ এবং তাঁর সমর্থনকারী রাশিয়াকে দায়ী করে। শাস্তি হিসেবে সিরিয়ায় মিসাইল হামলা চালানোর ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সিরিয়া ও রাশিয়া রাসায়নিক হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে। রাশিয়া দাবি করে, সিরিয়ায় হামলা চালানোর অজুহাত হিসেবে এমন অভিযোগ দাঁড় করেছে পশ্চিমা মিত্ররা। এ নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র বাদানুবাদের মধ্যেই সিরিয়ার স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাতে মিসাইল হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।

শুরু থেকেই পার্লামেন্টে আলোচনার মাধ্যমে হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য থেরেসা মের ওপর চাপ ছিল। সেটি তিনি উপেক্ষা করেন।

গতকাল পার্লামেন্টে বিতর্কের শুরুতে থেরেসা মে সিরিয়া হামলা এবং নিজের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের রাস্তায়, সিরিয়ায় অথবা বিশ্বের কোথাও রাসায়নিক অন্ত্রের ব্যবহার স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া যায় না। মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে এই হামলা চালানো হয়েছে। এতে কোনো আইন ভঙ্গ হয়নি। তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করলে রাশিয়া তাতে আপত্তি জানিয়ে আটকে দেবে। এতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রনীতিকে রাশিয়া বাধাগ্রস্ত করার সুযোগ পায়।

ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টে সোমবার যখন বিতর্ক চলছিল, তখন বাইরে শত শত লোক সিরিয়ায় হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ছবি: সংগৃহীত
ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টে সোমবার যখন বিতর্ক চলছিল, তখন বাইরে শত শত লোক সিরিয়ায় হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ছবি: সংগৃহীত

পার্লামেন্টে আলোচনা না করার যুক্তি হিসেবে থেরেসা মে বলেন, স্পর্শকাতর অনেক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসবের অনেক কিছুই এমপিদের কাছে খোলসা করা যায় না।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমপিদের কাজ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে পার্লামেন্টে জবাবদিহি করা। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার কাজ জাতীয় স্বার্থে সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।’ বাশার আল-আসাদ যে ওই রাসায়নিক হামলার জন্য দায়ী, সে বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিত বলে দাবি করেন মে।

তবে বিরোধী দলের নেতা জেরেমি করবিন এ বিষয়ে প্রমাণ হাজিরের জন্য থেরেসা মের প্রতি আহ্বান জানান।

অন্য দেশে হামলার বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু ২০০৩ সালে ইরাক হামলার সময় থেকে প্রতিটি যুদ্ধে জড়ানোর আগে পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীরা। করবিন বলেন, থেরেসা মে পার্লামেন্টের অনুমোদন নেওয়ার এই রীতি ভঙ্গ করেছেন।

আজীবন যুদ্ধবিরোধী হিসেবে পরিচিত এই নেতা বলেন, বোমা হামলার সঙ্গে মানুষের জীবন-মৃত্যুর যে বিষয় জড়িত, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর হতে পারে না। অন্য দেশে বোমা হামলা চালানোর মতো এমন গুরুতর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করতে ‘সমর ক্ষমতা আইন’ প্রণয়নের দাবি তোলেন করবিন।

ওয়েস্টমিনস্টারে স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এসএনপি) নেতা ব্ল্যাকফোর্ড বলেন, হামলা চালিয়ে আসার পর পার্লামেন্টে আলোচনা গ্রহণযোগ্য নয়। লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের উপনেতা জো সুইনডন বলেন, সবাইকে অন্ধকারে রেখে হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ হামলার আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনেক কিছু যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন ছিল।

ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টে যখন বিতর্ক চলছিল, তখন পার্লামেন্টের বাইরে শত শত লোক সিরিয়ায় হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ‘স্টপ দ্য ওয়ার কোয়ালিশন’ ওই বিক্ষোভের আয়োজন করে।