মোদির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বললেন প্রবীণ বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা

ভারতের শাসক দল বিজেপির প্রবীণ নেতা সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দলীয় সাংসদদের বিদ্রোহ করার ডাক দিলেন। চার বছর ধরে দলে ব্রাত্য দুই শীর্ষ নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি ও মুরলি মনোহর যোশীকেও ‘দেশের স্বার্থে’ সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। দলীয় সাংসদদের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখে তিনি বলেছেন, প্রিয় বন্ধু, মুখ খুলুন। 

‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকায় এক উপসম্পাদকীয় নিবন্ধে দেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা আজ মঙ্গলবার এ আহ্বান জানান। এর আগে নোট বাতিল, অভিন্ন কর কাঠামোর প্রচলন এবং বিপুল খেলাপি ঋণ নিয়ে যশবন্ত তাঁর নিজের (বিজেপি) সরকারের কড়া সমালোচনা করেও এক নিবন্ধ লিখেছিলেন। তাতে তাঁর বক্তব্য ছিল, এখন প্রতিবাদী না হলে কবে হব? এবারের নিবন্ধ তার তুলনায় আরও কড়া। খোলা চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘২০১৪ সালে সাড়া জাগিয়ে ক্ষমতায় এসেও মাত্র চার বছরের মধ্যে আমরা পথ ও মানুষের আস্থা—দুটিই হারিয়ে ফেলেছি।’
যশবন্ত সিনহার নিবন্ধের শিরোনাম, ‘ডিয়ার ফ্রেন্ড, স্পিক আপ’। তিনি লিখেছেন, আমরা ভেবেছিলাম, ‘লোকসভা ভোটে অপ্রত্যাশিত জয় দেশের ইতিহাসে এক নতুন উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করবে। আমরা দৃঢ়ভাবে প্রধানমন্ত্রীর পাশে সমর্থন নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। সরকার পাঁচ–পাঁচটা বাজেটও পেশ করল। সব ধরনের সুযোগের সদ্ব্যবহার করল। কিন্তু দেশজুড়ে চরম হতাশা।’
কোন কোন ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ, যশবন্ত সেগুলো একটির পর একটি সাজিয়ে দিয়েছেন। যেমন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাংক দুর্নীতি, সামাজিক ক্ষেত্রে নারী নির্যাতন, একের পর এক ধর্ষণ, তফসিল জাতি ও উপজাতিদের ওপর অত্যাচার, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রহীনতা, সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষ বিচারপতিদের বিদ্রোহ। এসবের উল্লেখ করে যশবন্ত লিখেছেন, ‘আজ মনে হচ্ছে, মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া হাত করে কোনোক্রমেই স্রেফ ভোটে জেতাই হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু সেটাও কতটা সম্ভব হবে নিশ্চিত নয়।’ দলীয় সাংসদদের উদ্দেশে যশবন্ত লিখেছেন, ‘অভিজ্ঞতার নিরিখে বলতে পারি, আপনাদের অর্ধেক আগামীবার টিকিট পাবেন না। পেলেও কতজন জিততে পারবেন বলা কঠিন। কারণ, গতবার বিজেপি ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। বিরুদ্ধে ছিল ৬৯ শতাংশ। বিরোধীরা একজোট হলে আপনারা ভেসে যাবেন। তাই দেশের স্বার্থে সরব হোন।’ যশবন্ত লিখেছেন, ‘আশার কথা, অন্তত পাঁচজন তফসিল জাতির সাংসদ তাঁদের হতাশা গোপন না করে সরব হয়েছেন। আপনারাও মৌন থাকবেন না।’
যশবন্ত সিনহার এই খোলা চিঠির ঠিক দুদিন আগে দেশের ৪৯ জন সাবেক আমলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এক চিঠিতে সাম্প্রতিক ধর্ষণকাণ্ডে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁরা লিখেছিলেন, জম্মুর কাঠুয়া ও উত্তর প্রদেশের উন্নাওয়ের ধর্ষণের ঘটনায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। দুটি রাজ্যই বিজেপি শাসিত। দুটি ঘটনাতেই শাসক দলের পাণ্ডারা জড়িত। দুটিতেই পুলিশ ও প্রশাসন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আড়াল করেছে বহুদিন। প্রধানমন্ত্রী এত দিন নীরব দর্শক ছিলেন। দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠার পর অবশেষে তিনি মুখ খোলেন।
বিজেপি কোণঠাসা। কর্ণাটকের ভোটে বিজেপি ভালো না করলে দলের ক্ষোভ কোন আকার নেয়, আপাতত চলছে তার জল্পনা। দলীয় সদস্যদের কাছে লেখা যশবন্ত সিনহার খোলা চিঠি সেই জল্পনা আরও উসকে দেয় কি না, আপাতত তাই দেখার।