রাউল কাস্ত্রো আমলের হতাশা কাটাতে পারবেন নতুন নেতা?

মিগেল ডিয়াজ-কানেল
মিগেল ডিয়াজ-কানেল

কিউবার নতুন প্রেসিডেন্ট হতে চলা ব্যক্তিটি হবেন তরুণ প্রজন্মের নেতা। দ্বীপরাষ্ট্রটির আধুনিকায়নের পক্ষে সরব অবস্থান তাঁর। কিন্তু একটা দীর্ঘ সময় তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য। ফলে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ঢালাওভাবে তিনি পরিবর্তন আনবেন-এমনটা মনে করার কারণ দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

৮৬ বছর বয়সী রাউল কাস্ত্রোর উত্তরসূরি হতে চলেছেন ৫৭ বছর বয়সী প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মিগেল ডিয়াজ-কানেল। আজ বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার কথা। ১৯৫৯ সালে কিউবা বিপ্লবের পর জন্ম নেওয়া দেশটির প্রথম নেতাও হবেন ডিয়াজ-কানেল। নয় বছর আগে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকারে যোগ দেন তিনি।

রাউল কাস্ত্রোর আমলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধীরগতিতে অনেক কিউবানের মধ্যে একধরনের হতাশা তৈরি হয়েছিল। তাঁরাই এখন আশা করছেন, পরিস্থিতি ফেরাবেন মিগেল ডিয়াজ-কানেল।

ডিয়াজ-কানেলের জন্মভূমি ভিলা ক্লারা প্রদেশের সান্তা ক্লারাতে জন্ম নেওয়া ও বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের শিক্ষক আরটুরো লোপেজ-লেভি বলেন, মিগেল ডিয়াজ-কানেল আরও নমনীয় ও আধুনিক হবেন—এমনটিই প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যদিও ডিয়াজ-কানেলের রাজনৈতিক মতাদর্শ কী, এখনো তা ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়েছে।

ডিয়াজ-কানেলের সাবেক এক শিক্ষক বলেন, মেধাবী ছাত্র ছিলেন ডিয়াজ-কানেল। রাজনৈতিক জীবন শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোন তিনি। কিউবার অন্যতম মিত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯০-এর দশকে কিউবার অর্থনৈতিক সংকটের সময় ভিলা ক্লারা অঞ্চলের পার্টিপ্রধান হন ডিয়াজ।

ডিয়াজ-কানেল কিউবার দ্রুত বিকাশমান পর্যটনশিল্প ও বিদেশি বিনিয়োগের কেন্দ্র হলগিনে পার্টিপ্রধান হতে ২০০৩ সালে সেখানে যান। উচ্চশিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী হতে ২০০৯ সালে তাঁকে হাভানায় ডেকে পাঠানো হয়। এবং ২০১৩ সালে কাস্ত্রোর ডান হাতে পরিণত হন তিনি। রাউল কাস্ত্রোর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সব কর্মসূচিতে পাশে থাকতেন ডিয়াজ-কানেল। সরকারের হয়ে বিদেশ সফরও করেছেন তিনি।

কিউবার অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক কার্লোস আলজুগারায় বলেন, মিগেল ডিয়াজ-কানেল হলেন সেই ব্যক্তি, যাঁকে রাউল কাস্ত্রো বিশ্বাস করেন।

প্রায় এক যুগ ক্ষমতায় থেকে আজ পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো। রাষ্ট্র পরিচালনার হাল এবার যাবে এক নতুন প্রজন্মের হাতে। এর মধ্য দিয়ে যে শুধু রাউলের শাসনেরই অবসান ঘটছে তা নয়, শেষ হতে যাচ্ছে দীর্ঘ ছয় দশকের কাস্ত্রো যুগেরও।

৮৬ বছর বয়সী রাউল ক্ষমতায় এসেছিলেন ২০০৬ সালে, যখন বড় ভাই ফিদেল কাস্ত্রো অসুস্থ হয়ে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। আর ফিদেল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসেছিলেন ১৯৫৯ সালে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। সব মিলিয়ে দুজন দেশ পরিচালনা করেন প্রায় ৬০ বছর। এই সময়ে তাঁরা ক্যারিবীয় এই দ্বীপদেশটিকে স্নায়ুযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে দাঁড় করান। সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের ভরাডুবি হলেও নিজ দেশে এই ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন দুই ভাই মিলে।