জার্মানিতে নেকড়ে বিতর্ক

জার্মানিতে একটি জঙ্গলের পাশে নেকড়ে। ছবি: সংগৃহীত
জার্মানিতে একটি জঙ্গলের পাশে নেকড়ে। ছবি: সংগৃহীত

জার্মানিতে নেকড়ের সংখ্যা ক্রমশই বাড়তে থাকায় বাড়তি বিপদ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। ২০০০ সালের আগে শত বছরে জার্মানির জঙ্গলগুলো প্রায় নেকড়েশূন্য হয়ে পড়েছিল। নেকড়েকে তখন মানুষ ও গবাদিপশুর জন্য ঝুঁকি হিসেবেই বিবেচনা করে তাদের নিধন করা হয়েছিল।

২০০০ সালে একটি নেকড়ে দম্পতি পোল্যান্ডের জঙ্গল থেকে জার্মানিতে চলে আসার পর বন্য প্রাণী সুরক্ষা সংগঠনগুলোর যুক্তি এবং অনুরোধে পুনরায় জার্মানিতে নেকড়ে সুরক্ষা প্রকল্প শুরু হয়। পোল্যান্ড থেকে আসা সেই নেকড়ে দম্পতির বংশবিস্তৃত হয়ে এখন জার্মানির নানা জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়েছে। জার্মানির জঙ্গলগুলোতে এখন নেকড়েদের প্রায় ৬০ দল রয়েছে, আর এই নেকড়ের সংখ্যা প্রায় ৬০০।

জার্মানির জঙ্গলগুলোতে নেকড়েদের এই বংশবিস্তার বিপদে ফেলেছে জঙ্গলসংলগ্ন গ্রাম বা গবাদিপশু পালকদের। নেকড়েদের দল প্রায়ই গবাদিপশুর ওপর আক্রমণ করছে। এ ছাড়া জঙ্গলসংলগ্ন গ্রামগুলোর অধিবাসীরা তাদের শিশুদের বাইরে খেলতে পাঠিয়ে আতঙ্কিত থাকছেন। এই সুযোগে বৈধ বন্য প্রাণী শিকারিদের সংগঠনগুলো পুনরায় নেকড়ে শিকার আইন করার তাগিদ দিচ্ছেন।

জার্মানি সরকারের প্রকৃতি সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান বিয়ার্টে ইয়েসেল বলেছেন, এই মুহূর্তে জার্মানির সাতটি রাজ্যের জঙ্গলে নেকড়েদের দল ছড়িয়ে রয়েছে। ২০০০ সালের পর থেকে বনসংলগ্ন রাস্তাগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪০ নেকড়ে, তা ছাড়া অবৈধ শিকারিদের হাতে ২৬ নেকড়ে নিহত হয়েছে বিধায় নেকড়ের সংখ্যা হ্রাস করার কোনো কারণ নেই বলে তিনি জানান। জার্মানির ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর পাচারের সভানেত্রী ডায়না প্যাটসেল নেকড়ে নিধনের বিষয়ে যেকোনো নতুন আইনের বিরোধিতা করেছেন।

জার্মানির জঙ্গলগুলোতে নেকড়েদের ক্রমবৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে এখন রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। জার্মানির ফ্রি লিবারেল দল নেকড়েদের নিধনের জন্য নতুন আইন করার কথা বলেছে। দলটির কৃষিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জঙ্গলের পাশে তার দিয়ে দেয়াল তৈরি করে নেকড়েদের খপ্পর থেকে কৃষকদের গবাদিপশু রক্ষা করা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন। নেকড়েদের কারণে অনেক কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

ক্ষমতাসীন জোট সরকারের পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব সামাজিক গণতান্ত্রিক দলের রিটা সয়ার্জসয়লার নেকড়েদের কারণে শুধু কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে, তা মানতে অস্বীকার করেছেন। পরিবেশবাদী সবুজ দলের নেত্রী স্টেফি লেমকে নেকড়ে নিয়ে অযাচিত আতঙ্কের সমালোচনা করে জঙ্গলগুলোতে নেকড়েদের অভয়ারণ্য গড়ে তোলার চেষ্টার কথা বলেছেন। জার্মানির বাম দল দ্য লেফট ও নেকড়েদের নিধন নীতির বিরোধিতা করে বলেছে, হত্যা-নিধনের আইনের অর্থই নেকড়ের পশম ও চামড়া দিয়ে তৈরি ধনী মানুষদের ফ্যাশনের জোগান দেওয়া।