পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমার সময় বাড়ল

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদের বিক্ষোভ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদের বিক্ষোভ। প্রথম আলো ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় এক দিন বাড়াল রাজ্যের নির্বাচন কমিশন। গতকাল শনিবার সময় বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বাধা ও তাণ্ডবের মুখে পড়ে যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি, তাঁদের জন্য আগামীকাল সোমবার এক দিনের জন্য সময় বাড়িয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, ২৫ এপ্রিল হবে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা। ২৮ এপ্রিল হবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। তবে নির্বাচন কমিশন এদিন কবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই তারিখ ঘোষণা করেনি। বলা হয়েছে, আগামীকাল এক বৈঠকের পর ঘোষণা করা হবে নতুন নির্বাচনের তারিখ।

গতকাল রাজ্য নির্বাচন কমিশন ১০টি বিরোধী দলকে পৃথকভাবে কমিশনে ডাকেন তাদের মতামত জানানোর জন্য। এই বৈঠকে ৯টি দল যোগ দিয়ে তাদের মতামত জানালেও যোগ দেয়নি বিজেপি। বিজেপির অভিযোগ, তারা আগেই তাদের পাঁচ প্রতিনিধির বৈঠকে যোগদানের কথা নির্বাচন কমিশনে জানালেও পুলিশ এদিন নির্বাচন কমিশনে ঢুকতে বাধা দিলে বিজেপির পাঁচ প্রতিনিধি এবং একজন আইনজীবী বৈঠক বয়কট করে সোজা চলে যান কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে। সেখানে তাঁরা লিখিত অভিযোগ করে জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করেছে নির্বাচন কমিশন। একই অভিযোগ করেন বিজেপির প্রতিনিধিরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনেও।

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২ এপ্রিল। শেষ হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমার দিন থেকে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যব্যাপী সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়। বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাঁধা, মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা, মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি, মারপিট, বোমা হামলা, অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।


এর আগে নির্বাচন কমিশন রাজ্যের ত্রিস্তরবিশিষ্ট পঞ্চায়েত নির্বাচন আগামী ১, ৩ ও ৫ মে অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দেয়। এই তারিখের মধ্যে ১ মে তারিখের তীব্র বিরোধিতা করে রাজ্যের বিরোধী বিভিন্ন শ্রমিক গোষ্ঠী। তাদের দাবি ছিল, ১ মে ঐতিহাসিক মে দিবস। বিশ্বজুড়ে পালিত হয় মহান দিনটি। সেদিন কীভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে? এ নিয়ে শ্রমিকেরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও দায়ের করেন। ফলে, এখন যে আর ১ মে নির্বাচন হচ্ছে না, তা নিশ্চিত হয়ে গেছে। কাল নির্বাচন কমিশন নতুন করে ঘোষণা দেবে, কবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তবে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে, তারা চাইছে রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচনের পর্ব সেরে নিতে।

গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের কাছে এই নির্বাচন নিয়ে জোর রাজনৈতিক ধাক্কা খায় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশন। কলকাতা হাইকোর্ট শুক্রবার বিকেলে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে দায়ের করা মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের একক বেঞ্চ নির্দেশ দেন, পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন কমিশনকে নতুন করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে হবে। পাশাপাশি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য আরও এক দিন বাড়াতে হবে।

এবার এই রাজ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৮ হাজার ৬৫০টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ২১৭টি আসন এবং জেলা পরিষদের ৮২৫টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে।