ভারতের প্রধান বিচারপতির অভিশংসনের নোটিশ খারিজ করলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান

ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র।
ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বিরুদ্ধে আনা ‘অভিশংসনের’ নোটিশ খারিজ হয়ে গেল। ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু আজ সোমবার সকালে এই সিদ্ধান্ত নেন। প্রধান বিচারপতিকে অপসারণের জন্য গত শুক্রবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনের নোটিশ জমা দিয়েছিল কংগ্রেসসহ মোট সাত বিরোধী দলের সদস্যরা।

এই প্রথম ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কোনো প্রধান বিচারপতিকে অভিশংসন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাবের পক্ষে মোট ৭১ জন রাজ্যসভা সদস্যের সম্মতিসূচক সইও নেওয়া হয়েছিল। এক মাস আগে নেওয়া ওই উদ্যোগে সই করলেও ইতিমধ্যে সাতজন সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে প্রস্তাবে পক্ষে ছিলেন ৬৪ জন সদস্য, প্রয়োজনের তুলনায় যা ১৪টি বেশি। গত শুক্রবার সেই নোটিশ জমা পড়ার পরদিন ভেঙ্কাইয়া নাইডু তেলেঙ্গানায় চলে যান। গতকাল রোববার সেখান থেকে দিল্লি ফিরে বিভিন্নজনের সঙ্গে আলোচনার পর আজ সকালে নোটিশটি তিনি খারিজ করে দেন। যুক্তি হিসেবে উপরাষ্ট্রপতি বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো দেখানো হয়েছে, অভিশংসনের জন্য সেগুলো যথেষ্ট নয়। তিনি জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন। তাঁদের মতামতও নিয়েছেন।

বিচারপতি অপসারণ ক্ষেত্রে ১৯৬৮ সালের ‘জাজেস (ইনকোয়ারি) আইন’-এ বলা হয়েছে, রাজ্যসভায় এমন নোটিশ জমা পড়লে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনা করে এবং অভিযোগের যথার্থতা বিবেচনা করে নোটিশটি গ্রহণ অথবা খারিজ করতে পারেন। নোটিশ খারিজ হলে আবেদনকারীদের কাছে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কংগ্রেস যে তেমনই কিছু করবে, সেই ইঙ্গিত গতকালই কংগ্রেস নেতা কপিল সিবাল দিয়েছিলেন।

ভেঙ্কাইয়া নাইডু আজ সকালেই নোটিশ খারিজ করে দেন যাতে প্রধান বিচারপতি সকাল থেকেই সর্বোচ্চ আদালতে নিজের এজলাসের কাজ শুরু করতে পারেন। প্রথা অনুযায়ী প্রতিদিন আদালতের কাজ শুরুর আগে অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি মিনিট পাঁচেক চা পান করেন। আজ চা পানের অধ্যায় দীর্ঘায়িত হয় ২০ মিনিট। ফলে আদালতের কাজ শুরু হয় ১৫ মিনিট দেরিতে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, প্রধান বিচারপতি চাইছিলেন নোটিশ খারিজ হওয়ার পর এজলাসে যেতে। কারণ, ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত তিনি যাতে মামলা না শোনেন, সে জন্য কংগ্রেস থেকে আগেই দাবি জানানো হয়েছিল।

এর আগে যে নোটিশগুলো বিবেচনার জন্য সংসদে পেশ করা হয়েছিল, সেগুলোর কোনোটিই এভাবে খারিজ হয়নি। বিচারপতি রামস্বামী, বিচারপতি দিনাকরণ, বিচারপতি সেন কিংবা বিচারপতি গ্যাংগেলে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সেই সময়কার লোকসভা বা রাজ্যসভার অধ্যক্ষরা সরাসরি খারিজ না করে সেই ভার তদন্ত কমিটির ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। বিচারপতি গ্যাংগেলের বিরুদ্ধে আনা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত কমিটি খারিজ করে দিয়েছিল। বাকিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রাহ্য হয়। অভিশংসনের শুনানিও শুরু হয়। এটা ঠিক, বাকি তিন বিচারপতিদের কাউকেই শেষ পর্যন্ত অভিশংসন করা যায়নি। বিচারপতি রামস্বামীর বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির আগে কংগ্রেস কক্ষ ত্যাগ করে। বিচারপতি সেন ও দিনাকরণ তার আগেই ইস্তফা দেন।

অর্থমন্ত্রী আইনজীবী অরুণ জেটলি শুক্রবারই কংগ্রেসের এই উদ্যোগকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ আখ্যা দিয়েছিলেন। এত দ্রুত তা খারিজের মধ্য দিয়ে ভেঙ্কাইয়া নাইডুও সরকারি মনোভাবের প্রতিফলন ঘটালেন।