ভারতের দিল্লির জেসিকা লালের হত্যাকারীকে ক্ষমা করেছেন সাবরিনা লাল

জেসিকা লাল। ছবি: এএফপি
জেসিকা লাল। ছবি: এএফপি

বলিউডের ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ সিনেমাটি কথা মনে আছে? ওই সিনেমার ‘জেসিকা লাল’ কোনো গল্পের চরিত্র নয়। বাস্তবেরই একজন ছিলেন। ১৯৯৯ সালে নৃশংসভাবে খুন হন তিনি।

প্রায় দুই দশক পর বোন জেসিকা লালের হত্যাকারীকে মাফ করে দিলেন সাবরিনা লাল। মনু শর্মা নামের ওই হত্যাকারী সম্প্রতি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করে ভারতের তিহার জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।

এত বছর পর মনু শর্মার ওপর আর কোনো ক্ষোভ নেই সাবরিনা লালের। নজিরবিহীন ওই লড়াই শেষে সুবিচার পেয়েছিলেন তিনি। মনু শর্মা ছাড়া পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় সাবরিনা বলেন, ‘আমি জেনেছি যে তিনি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো ভালো কাজ করছেন এবং কারাগারে বন্দীদের সাহায্য করছেন, যা আমি মনে করি সংস্কারের প্রতিফলন।’ কেন্দ্রীয় কারাগারের কল্যাণবিষয়ক কর্মকর্তাকে লেখা এক চিঠিতে সাবরিনা লেখেন, ‘তাঁর মুক্তির ব্যাপারে আমার আর কোনো আপত্তি নেই, কারণ তিনি ১৫ বছর জেলে কাটিয়েছেন।’

চিঠি প্রদানের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে সাবরিনা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘তিনি তাঁর দণ্ড ভোগ করেছেন। আমার মন তাঁকে মাফ করে দিয়েছে।’

জেসিকা লাল দিল্লির একজন মডেল ও রেস্তোরাঁকর্মী ছিলেন। তিনি যে রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন, একদিন দুই সহযোগীসহ মনু শর্মা নামের এক ব্যক্তি সেখানে ঢুকে তাঁকে মদ পরিবেশন করতে বলেন। কিন্তু তখন বার বন্ধ হয়ে গেছে। জেসিকা তাঁদের মদ পরিবেশনে রাজি হননি। এরপর মনু শর্মা ক্ষিপ্ত হয়ে রেস্তোরাঁভর্তি লোকের উপস্থিতিতে জেসিকাকে গুলি করে হত্যা করেন। যখন এ নিয়ে মামলা হলো, তখন রেস্তোরাঁয় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। কেউ ঝামেলা এড়াতে, কেউ মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ফলে সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে মামলাটির অপমৃত্যু ঘটে এবং ২০০৬ সালে মনু শর্মা বেকসুর খালাস পান।

মনু শর্মা ছিলে হরিয়ানার ধনাঢ্য মুখ্যমন্ত্রী ভুপেন্দর সিংয়ের সন্তান। মামলায় যে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়েছিল, সেটিও সবার জানা। এরপর এ নিয়ে সারা দেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়। এ কাহিনি নিয়ে ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ বা ‘জেসিকাকে কেউ খুন করেনি’ নামে একটি ছবি নির্মাণ করেন রাজকুমার গুপ্তা। এরপরই চারদিকে হইচই পড়ে যায়। মামলার পুনঃ তদন্ত হয় এবং অপরাধী সাব্যস্ত করে আদালত মনু শর্মাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।