পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে সহিংসতা, নিহত ২

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরের এক আইনজীবীকে ধরে নিয়ে মারপিট করা হয়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি, কলকাতা
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরের এক আইনজীবীকে ধরে নিয়ে মারপিট করা হয়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি, কলকাতা

হাইকোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় এক দিন বাড়লেও শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বাধা ও সহিংসতার মুখে অনেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। আজ সোমবার বিরোধীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন।

নিহত দুজনের মধ্যে একজন হলেন বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের নেতা শেখ দিলদার। তিনি বীরভূমের সিউরিতে সহিংসতায় নিহত হন। নিহত অপর ব্যক্তি তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। তবে তাঁর নাম প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত অফিসের প্রবেশমুখে শাসক দলের নেতা-কর্মীরা বাধা সৃষ্টি করেন। বিরোধী দলের সদস্যদের মারপিট করা হয় এবং মনোনয়নপ্রার্থীদের অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যজুড়ে আজ এই চিত্র দেখা যায়।

রাজ্যের মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জে কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। বহরমপুরের রাস্তায় বেদম মারধর করা হয় কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীকে। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পশ্চিম বর্ধমানের লাউদোহায় এসডিও অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পথে বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে লাঞ্ছিত করেন তৃণমূলের সমর্থকেরা। পরে বাবুল সুপ্রিয় দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা না দিয়ে ফিরে আসেন। বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেছেন, আজ রাজ্যের সর্বত্র মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিভিন্ন এলাকায় গুলি চালিয়েছে। আলিপুরে বিজেপির এক প্রার্থীর প্রস্তাবক আইনজীবীকে ধরে নিয়ে বেদম মারপিট করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন বেশ কিছু সাংবাদিক। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণায় জাতীয় দৈনিকের এক সাংবাদিকের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কলকাতার আলিপুরের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে শাসক দলের হাতে অপহৃত হন এক নারী সাংবাদিক। পরে আড়াই ঘণ্টা পর তাঁকে উদ্ধার করা হয়। ডায়মন্ডহারবারে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো বিরোধী প্রার্থীদের অস্ত্র দেখিয়ে এবং মারপিট করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনায় গোপালনগরে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে তৃণমূলের এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

বারইপুরে বিজেপি অফিসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বীরভূমের দুবরাজপুরে তৃণমূল সমর্থকেরা মুখে কাপড় বেঁধে হামলা চালিয়েছে বিরোধীদের ওপর। সিউরিতে বিভিন্ন বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে ও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বহু বাড়ি। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় সিপিএমের অফিস ভাঙচুর করা হয়। আহত হয়েছেন সিপিএমের স্থানীয় নেতাসহ বেশ কিছু কর্মী। লালবাগ ও দুবরাজপুরে অস্ত্র হাতে মিছিল করে বিরোধীদের তাড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। জলপাইগুড়িতে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ হয়েছে। লালবাগে সিপিএম অফিস ভাঙচুর হয়েছে। হুগলির চণ্ডীতলা এবং আরামবাগে বিরোধীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রামপুরহাটে এসডিও অফিসে ঢোকার পথ বাঁশ দিয়ে আটকে দেয় তৃণমূল। মুর্শিদাবাদে সিপিএম অফিস ভাঙচুর হয়েছে। বাঁকুড়ায় বিজেপির পার্টি অফিস হয়েছে ভাঙচুর। এ ছাড়া বীরভূমে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ হয়েছে। বীরভূমের মুরারইতে ব্যাপক বোমাবাজি করেছে তৃণমূল। সকালে আলিপুরের এসডিও অফিস ও জলপাইগুড়ির বিডিও অফিস দখল করে নেয় তৃণমূল।

পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাটে সিপিএমের পার্টি অফিস ভাঙচুর হয়। হুগলির হরিপালে বিডিও অফিসে হামলা চালায় তৃণমূল। নন্দীগ্রামে বিজেপির প্রার্থীদের বিডিও অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। হলদিয়ায় এসডিও অফিস থেকে বিরোধী প্রার্থীদের বের করে দেওয়া হয়। হুগলির আরামবাগে সিপিএমের জোনাল পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়। মারপিট করা হয় নেতা-কর্মীদের। গুরুতর জখম হন সিপিএমের সাবেক সাংসদ শক্তি মোহন মালিক।