ইউরোপে হুমকির মুখে স্বাধীন সাংবাদিকতা

‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৭-২০১৮’ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ইউরোপে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত ও নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে।
‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৭-২০১৮’ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ইউরোপে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত ও নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে।

সাম্প্রতিককালে ইউরোপে গণমাধ্যমের প্রতি চাপ ক্রমশই বাড়ছে। সাংবাদিক ও ব্লগারদের ওপর হত্যাসহ নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। আজ বুধবার ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৭-২০১৮’, বিশ্বব্যাপী ১৮০ দেশের গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতাবিষয়ক সূচকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ইউরোপে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত ও নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে।

এই বছরে গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতাবিষয়ক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের প্রতিনিধি কাটিয়া গ্লোগার জানিয়েছেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং কিছু কিছু দেশের সরকার, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রতি নানা ধরনের হুমকি ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। এতে করে গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতাসহ স্বাধীন গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তিগুলো ধ্বংসের চেষ্টা হচ্ছে। কাটিয়া গ্লোগার আরও বলেছেন, দুর্ভাগ্যবশত এ ধরনের ঘটনাগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে, যা আগুন নিয়ে খেলার মতো ঘটনা বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস তাদের প্রতিবেদনে ইউরোপে সাংবাদিকতার ঝুঁকি হিসেবে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির কথা উল্লেখ করেছে, এই দেশ দুটির সরকার খোলাখুলিভাবে গণমাধ্যম এবং স্বাধীন সাংবাদিকতাকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে বক্তব্য দিচ্ছে। এই দেশ দুটি ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য সদস্য দেশ যেমন মাল্টা, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়াতে স্বাধীন সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়ছে। পাশাপাশি বলকান দেশ সার্বিয়ার মুক্ত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার সূচক নেমে গেছে। এসব দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদেরা সাংবাদিকদের সঙ্গে শত্রুতা করেন, অপমান করেন এবং আইনিভাবে হেনস্তা করছেন। এ ধরনের চাপের মুখে গণমাধ্যমের মালিকপক্ষ অনেক অনুসন্ধানমূলক খবর প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করছেন।

ইইউভুক্ত দেশ চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়াতে অনেকগুলো প্রধান গণমাধ্যমের মালিক সরকারের সঙ্গে জড়িত রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব। চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রিজ বাবিস এদের মধ্য অন্যতম। সেখানে গণমাধ্যম, সরকারবিরোধী যেকোনো সমালোচনা প্রকাশে অনাগ্রহী। এ ছাড়া এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিক জন কুশিককে স্লোভাকিয়াতে হত্যা করা নিয়ে দেশটিতে স্বাধীন সাংবাদিকতা নিয়ে সংশয় বেড়েছে।

ইইউভুক্ত আরেক দেশ মাল্টার স্বাধীন সাংবাদিকতার সূচক ১৮ থেকে নামে ৬৫তে পৌঁছেছে। দেশটিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও ব্লগার ডেফনি কারুনা গালিজিয়াকে ২০১৭ সালরে অক্টোবরে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর সময় পর্যন্ত ডেফনি কারুনা গালিজিয়ার বিরুদ্ধে হেনস্তা করার মতো ৪০টি মামলা ছিল। এতে বোঝা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সদস্য দেশটিতে স্বাধীন সাংবাদিকতার চেয়ে রাজনীতি, অর্থনীতি ও আইন এক অপরের স্বার্থে ব্যবহারেই বেশি আগ্রহী। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের রিপোর্টে জার্মানিতে গত বছর অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের সময় সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা ও হুমকি দেওয়ার নিন্দা করা হয়েছে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বিশ্বের ১৮০ দেশের গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার বিষয়ে সারা বিশ্বের মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, বিজ্ঞানীদের মতো বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সূচক তৈরি করে। ছয়টি পৃথক বিভাগে বিভক্ত হয়ে ৭১টি প্রশ্নের মাধ্যমে গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার বিষয়ে প্রতিবেদন ও সূচক তৈরি করা হয়।