বিজেপির ইশতেহারে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে আদালত জামায়াতের এক নেতার ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পরই ২০১৩ সালে ১১ মার্চ সহিংসতার পথ বেছে নেন বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকেরা। এএফপির এই ছবিটি সহিংসতা প্রকাশের জন্য বিজেপি তাদের ইশতেহারে ব্যবহার করেছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে আদালত জামায়াতের এক নেতার ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পরই ২০১৩ সালে ১১ মার্চ সহিংসতার পথ বেছে নেন বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকেরা। এএফপির এই ছবিটি সহিংসতা প্রকাশের জন্য বিজেপি তাদের ইশতেহারে ব্যবহার করেছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। নির্বাচন নিয়ে জটিলতা চলছেই। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা আর পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করতে চান না। এরই মধ্যে আবার বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ল বিজেপির ইশতেহার প্রকাশের পরই। কারণ, তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের সংঘর্ষের এক ছবি। আর এটা নিয়েই বিতর্ক এখন তুঙ্গে।

জি নিউজ ও ওয়ান ইন্ডিয়া ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দলীয় নেতাদের নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ গতকাল মঙ্গলবার তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। তাঁদের লক্ষ্য এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য বিজেপিকে দ্বিতীয় স্থানে নেওয়া। কিন্তু ইশতেহারে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে যে ছবিগুলো ব্যবহৃত হয়েছে, তাতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের এক সংঘর্ষের চিত্র। ছবিটি ২০১৩ সালের। রাজ্যর রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি করে বিজেপি রাজনৈতিক দেউলিয়ার পরিচয় দিয়েছে।

গতকাল পঞ্চায়েত নিয়ে আইনি জটিলতার অবসান হয়েছে। এরপর বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেটুকু মনোনয়ন জমা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, তা নিয়েই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত তারা। রাজ্যের শাসক দলকে কড়া টক্কর দিতে দল যে কোনোভাবে পিছপা হবে না, তা জানিয়ে দিয়েছেন গেরুয়া শিবির। সেদিনই প্রকাশ হয় নির্বাচনী ইশতেহার। ইশতেহারের প্রচ্ছদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দলটির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ও রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছবি। তবে বিতর্ক বাধে অন্য একটি ছবি ঘিরে। সংঘর্ষের কয়েকটি ছবির একটি পশ্চিমবঙ্গের তো নয়ই, পুরো ভারতেও নয়। সেটি বাংলাদেশের। বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের একটি ছবি জায়গা করে নিয়েছে বিজেপির ইশতেহারে। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে আদালত একজনের ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পরই ২০১৩ সালে ১১ মার্চ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকেরা। পথে নেমেই তাঁরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। সহিংসতার পথ বেছে নিয়ে তাঁরা রিকশাভ্যানে আগুন দেন। তখন পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষের অনেক ছবিটি তোলে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমগুলো। সেগুলোর একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে বিজেপির ইশতেহারে। ছবিটি বার্তা সংস্থা এএফপির। আর তা নিয়েই বেধেছে বিতর্ক। তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম, কংগ্রেসের প্রশ্ন, কেন পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাংলাদেশের ছবি? এর আগেও পশ্চিমবঙ্গের অশান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরতে এক বিজেপি নেত্রী ভোজপুরি সিনেমার ছবি তুলে ধরেছিলেন। পরে তা ধরাও পড়ে যায়। এবারও কি তেমনই ভুল, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মেলেনি।

২০১৩ সালে ১১ মার্চে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকেরা আন্দোলনে দিনেই বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পুলিশ আটক করেছিল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে।

তবে বিজেপি নেতাদের দাবি, সচেতনভাবেই রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো ভুল নেই। ইশতেহারের একটি অংশের লেখা পড়লে বোঝা যাবে ছবিটি কেন রাখা হয়েছে। বক্তব্যের সঙ্গে তুলনা টেনেই ছবিটি রাখা হয়েছে। এ বক্তব্য সত্ত্বেও ভোটের প্রচারে বাংলাদেশের সংঘর্ষের ছবি টেনে আনার বিষয়টি অনেকেই সহজভাবে নিচ্ছেন না। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ইশতেহারে ব্যবহার করা ছবি। ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ইশতেহারে ব্যবহার করা ছবি। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে জটিলতা কাটেনি
গতকাল কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা আর পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করতে চান না। বিরোধী দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য এক দিনের সময় বাড়ায়। এই দিন ছিল সোমবার। সেদিনই বিরোধী দলগুলো মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে ফের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বাধার সম্মুখীন হয়। এ নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ঘটে। প্রাণ হারায় দুজন। এরপরই ফের বিজেপি, কংগ্রেস, বাম দল এবং পিডিএস পৃথক পৃথকভাবে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করলে আদালত জানিয়ে দেন, তাঁরা আর পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে চান না

তবে পাশাপাশি আদালত এ কথাও বলেছেন, নির্বাচন অবাধ করতে বিভিন্ন বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে হাইকোর্ট জানিয়ে দেন, হোয়াটসঅ্যাপে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী প্রার্থীদের মনোনয়ন বৈধ করতে হবে এবং এটা করা না হলে হাইকোর্ট নির্বাচন বাতিল করে দেবেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ওই মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে।

কবে নির্বাচন হবে, এ ব্যাপারে এখনো দিন-তারিখ ঠিক করে উঠতে পারেনি রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্য সরকার চাইছে রমজানের আগেই ১৪ কিংবা ১৫ মে একটি তারিখে নির্বাচন সেরে নিতে। কিন্তু রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা ভেবে নির্বাচন কমিশন চাইছে দুটি কিংবা তিনটি তারিখে নির্বাচন সম্পন্ন করতে। ফলে এ নিয়ে সমঝোতা হতে পারেনি রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে। বুধবার তারিখ নির্ধারণের জন্য ফের বৈঠকে বসেছে রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন রাজ্যে অবাধ নির্বাচন করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের দাবি করলে তাও খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার চাইছে রাজ্যের পুলিশ দিয়ে নির্বাচন করতে।

পশ্চিমবঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৮ হাজার ৬৫০টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ২১৭টি আসন এবং জেলা পরিষদের ৮২৫টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, এর মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে তৃণমূল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে ৫৯ হাজার ৭৩৬ জন প্রার্থী। বিজেপি দিয়েছে ২৮ হাজার ৬৯৬ প্রার্থী, সিপিএম দিয়েছে ১৭ হাজার ৯০৪ জন এবং কংগ্রেস দিয়েছে ৭ হাজার ৬৪৯ প্রার্থী।

পঞ্চায়েত সমিতির আসনে তৃণমূল দিয়েছে ১২ হাজার ৮৬০ প্রার্থী, বিজেপি দিয়েছে ৬ হাজার ৩৫১ প্রার্থী, সিপিএম দিয়েছে ৪ হাজার ৫০৯ জন এবং কংগ্রেস দিয়েছে ১ হাজার ৮০৭ জন প্রার্থী।

জেলা পরিষদের আসনের জন্য তৃণমূল দিয়েছে ১ হাজার ৮৫ জন, বিজেপি ৮৩২ জন, সিপিএম ৫৬৮ জন এবং কংগ্রেস দিয়েছে ৪৩০ জন প্রার্থী।