'আমরা ভারতে বসে খাই, মিয়ানমারে শুয়ে ঘুমাই'

ছবিতে যে গোলাকার ঘরটি দেখা যাচ্ছে, সেটির অবস্থান ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তের মাঝখানে। লংওয়া গ্রামের এই ঘরটি আসলে একটি রাজপ্রাসাদ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ছবিতে যে গোলাকার ঘরটি দেখা যাচ্ছে, সেটির অবস্থান ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তের মাঝখানে। লংওয়া গ্রামের এই ঘরটি আসলে একটি রাজপ্রাসাদ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ঘরটির অবস্থান দুই দেশেই। এই ঘরের ঠিক মাঝ বরাবর গেছে দুই দেশের সীমান্তরেখা। লংওয়া গ্রামের এই ঘরটি ভারত ও মিয়ানমার—দুই দেশেই অবস্থিত। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এই ঘরের বাসিন্দারা খাওয়াদাওয়া করেন ভারতে। আর ঘুমান মিয়ানমারে!

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ঘরটি আসলে একটি ‘রাজপ্রাসাদ’। কনিয়াক নাগা উপজাতির রাজপরিবার এখানে থাকে। লংওয়া গ্রামের প্রধান ওই প্রাসাদে থাকলেও তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রামটির প্রধান বলেন, ‘আমি হচ্ছি এখানকার প্রধান। আমার প্রাসাদ দুই অংশে বিভক্ত। আমরা ভারতে খাই, মিয়ানমারে ঘুমাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেদের পৈতৃক নিবাসে বসবাস করছি। এখানে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’

ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে নাগাল্যান্ডের লংওয়া গ্রাম। কনিয়াক নাগা উপজাতির রাজপরিবার সেখানে বসবাস করে। এই রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয় ১৫ শতকে। দুই দেশে থাকা ওই রাজপ্রাসাদটি এক শ বছরের পুরোনো। অনেক পরে ১৯৭১ সালে সীমান্ত নির্ধারিত হয়। গ্রামটির মিয়ানমার ও ভারতের নাগরিকেরা কোনো ভিসা ছাড়াই উভয় দেশের ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন। তবে সীমান্তরেখার মাধ্যমে দুই দেশের মানুষের অবস্থান পৃথক করা হয়েছে।

লংওয়া গ্রামের প্রধান। ছবি: ভিডিও থেকে স্ক্রিনশর্ট নেওয়া
লংওয়া গ্রামের প্রধান। ছবি: ভিডিও থেকে স্ক্রিনশর্ট নেওয়া

লংওয়া গ্রামের অধিবাসীরা জানান, তাঁরা উভয় দেশের সেরাটা উপভোগ করেন। মিয়ানমার সরকার তাঁদের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা পরিচালনা করে থাকে। অন্যদিকে ভারতের নাগরিক হিসেবে ভোটাধিকারও আছে তাঁদের।

দুই দেশের সেনাসদস্যরা এই গ্রামে মোতায়েন থাকেন। স্থানীয় কিছু বাসিন্দা দুই দেশের সীমান্তে এভাবে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। লংওয়া গ্রামের নারী আখো তৈয়াঙ্গসু বিবিসিকে বলেন, ‘সিনেমায় আমি লড়াই দেখেছি। আন্তর্জাতিক সীমান্তে মানুষের জীবন কতটা দুর্বিষহ হয় সেটাও আমি দেখেছি। তাই আগামী দিনে কী ঘটবে, তা ভেবে আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই।’

তবে আশার কথা হচ্ছে, লংওয়া গ্রাম নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং সহসাই রাজনৈতিক কারণে সেখানে অপ্রীতিকর কিছু ঘটার আশঙ্কা কম।