এভারেস্টে উঠতে গিয়ে হারান দুই পা, এবার কৃত্রিম পায়েই জয় করেন এভারেস্ট

১৯৭৫ সাল থেকে শিয়া বোও এভারেস্টে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। পাঁচবারের চেষ্টায় এবার তিনি সফল হলেন। ছবি: এএফপি
১৯৭৫ সাল থেকে শিয়া বোও এভারেস্টে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। পাঁচবারের চেষ্টায় এবার তিনি সফল হলেন। ছবি: এএফপি

৪৩ বছর আগে চীনের পর্বতারোহী শিয়া বোও প্রথম এভারেস্টের চূড়ার কাছাকাছি গিয়ে প্রচণ্ড ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এর জেরে পায়ে ক্যানসার হওয়ায় ১৯৯৬ সালে হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু পিছপা হননি। স্বপ্নপূরণে অবিচল থেকে বেশ কয়েকবারের চেষ্টা সফল হয়েছেন সোমবার সকালে। ৬৯ বছরের শিয়া বোও ওই দিন কৃত্রিম পায়ে ভর করেই ২৯ হাজার ২৯ ফুট উঁচুতে ওঠেন। এভারেস্টর চূড়ায় মেলে ধরেন চীনের পতাকা। 

বিবিসি ও টাইমের খবরে বলা হয়, রেকর্ড গড়েছেন শিয়া বোও। কারণ, এর আগে দুই পা নেই এমন কেউ নেপালের দিক থেকে এভারেস্টর চূড়ায় উঠতে পারেননি। ১২ বছর আগে ২০০৬ সালে দুই পা হারানো পর্বতারোহী নিউজিল্যান্ডের মার্ক ইঙ্গলিস এভারেস্টে উঠেছিলেন চীনের তিব্বতের দিক থেকে। নেপালের দিকের চেয়ে তিব্বতের দিক দিয়ে চূড়ায় ওঠাকে অপেক্ষাকৃত সহজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৪৩ বছর আগে শিয়া বোও প্রথম এভারেস্টের চূড়ার কাছাকাছি গিয়ে প্রচণ্ড ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারণে পায়ে ক্যানসার হওয়ায় ১৯৯৬ সালে হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু পিছপা হননি শিয়া। ছবি: সংগৃহীত
৪৩ বছর আগে শিয়া বোও প্রথম এভারেস্টের চূড়ার কাছাকাছি গিয়ে প্রচণ্ড ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারণে পায়ে ক্যানসার হওয়ায় ১৯৯৬ সালে হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু পিছপা হননি শিয়া। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭৫ সাল থেকে শিয়া বোও এভারেস্টে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। গত বছর নেপাল সরকার দুই পা নেই—এমন কেউ এবং অন্ধদের জন্য এভারেস্টে ওঠা নিষিদ্ধ করে দেয়। এরপরই হতাশায় পড়েন শিয়া বোও। তবে এ বছর মার্চে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট সরকারের ওই নিষেধাজ্ঞা বেআইনি ঘোষণা করে। এর পরের মাসে তিনি পঞ্চমবারের মতো এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার অভিযান শুরু করেন। চূড়ায় পৌঁছানোর খবর বিশ্বব্যাপী মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন উইচ্যাটে শেয়ার করেন শিয়া বোও। ২৫ বছর বয়সে প্রথম এভারেস্টে ওঠার চেষ্টা করা শিয়া লেখেন, ‘এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছেছি নেপালের সময়ে সকাল ৮টা ২৬ মিনিটে! ৪০ বছরের স্বপ্ন পূরণ হলো।’

দুই পা হারানো শিয়া বোও বিশ্বকে দেখিয়ে দিলেন অদম্য ইচ্ছা থাকলেই কেবল স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। ছবি: এএফপি
দুই পা হারানো শিয়া বোও বিশ্বকে দেখিয়ে দিলেন অদম্য ইচ্ছা থাকলেই কেবল স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। ছবি: এএফপি

অভিযান শুরুর আগে বার্তা সংস্থা এএফপিকে শিয়া বোও বলেছিলেন, ‘এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা আমার স্বপ্ন। আমাকে স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। ব্যক্তিগতভাবে এটা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, আমার দুর্ভাগ্যের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ। সারা জীবন আমি এ স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাব।’ শেষ পর্যন্ত সোমবার সকালে তিনি তাঁর স্বপ্ন পূরণ করে ফেলেছেন।

স্বপ্নপূরণে অবিচল থেকে কয়েকবারের ব্যর্থ হওয়ার পর শিয়া বোও কৃত্রিম পায়ে ভর করেই সোমবার এভারেস্টর চূড়ায় মেলে ধরেন চীনের পতাকা। ছবি: টুইটার
স্বপ্নপূরণে অবিচল থেকে কয়েকবারের ব্যর্থ হওয়ার পর শিয়া বোও কৃত্রিম পায়ে ভর করেই সোমবার এভারেস্টর চূড়ায় মেলে ধরেন চীনের পতাকা। ছবি: টুইটার

শিয়া বোও ১৯৭৫ সালে তাঁর প্রথম অভিযানে এভারেস্টের চূড়ার কাছাকাছি গিয়ে প্রচণ্ড ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই অসুস্থতার কারণে পায়ে ক্যানসার হয়। ১৯৯৬ সালে হাঁটুর নিচ থেকে তাঁর দুই পা কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু হার না–মানা দলের সদস্য অদম্য শিয়া বোও হার মানেননি। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে অভিযানের জন্য নেপালে যান। ২০১৪ সালে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং ২০১৫ সালে ভূমিকম্পের পর দুর্ঘটনার সম্ভাবনার জন্য নেপাল সরকার দুবারই পর্বতারোহণ বন্ধ রেখেছিল। ছাড়ার পাত্র নন তিনি। ২০১৬ সালেও চেষ্টা চালান। মাত্র ২০০ মিটার ওঠার পর খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাঁকে ফিরেতে হয়েছিল। এক বছর বাদে এ বছর তিনি এভারেস্ট জয় করেন।

৬৯ বছর বয়সী শিয়া বোও এভারেস্টে উঠছেন। ছবি: সিনহুয়া
৬৯ বছর বয়সী শিয়া বোও এভারেস্টে উঠছেন। ছবি: সিনহুয়া