নিকারাগুয়ায় বিরোধীদের সঙ্গে বসতে চান প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগা

ডেনিয়েল ওর্তেগা। ছবি: রয়টার্স
ডেনিয়েল ওর্তেগা। ছবি: রয়টার্স


প্রায় মাসব্যাপী চলতে থাকা সহিংসতা নিরসনে বিরোধীপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সংকট নিরসনের আলোচনায় রাজি হয়েছেন নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগা। আজ বুধবার তিনি আলোচনায় বসতে পারেন।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্য আমেরিকার দেশটির রোমান ক্যাথলিক বিশপেরা এ সপ্তাহের শুরুর দিকে বলেছিলেন, তাঁরা জাতীয় সংলাপের বিষয়টিতে মধ্যস্থতা করবেন।

গতকাল মঙ্গলবার ওর্তেগার স্ত্রী ও সরকারের মুখপাত্র রোজারিও মুরিলো বলেন, ‘বিশপদের আয়োজনে জাতীয় সংলাপে প্রেসিডেন্ট উপস্থিত থাকবেন। আমরাও থাকব।’

স্যানডিনিস্টা ফ্রন্ট পার্টি-শাসিত মাতাগালাপা শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশর সংঘর্ষের পর ওর্তেগা এ বক্তব্য দেন। তিনি এই ফ্রন্টের নেতা।

ওই শহরের মেয়র স্যাদরাক জেলেডন বলেন, ডানপন্থী দুর্বৃত্তদের হাতে একজন খুন হয়েছেন। তবে আন্দোলনকারীরা বলছে, পুলিশের হাতে খুন হয়েছেন উইলবার রেইস নামের এক ব্যক্তি। নিকারাগুয়ার মানবাধিকার সংস্থার মুখপাত্র জার্মান হেরেরা বলেন, ওই সংঘর্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশ ১০ জনকে আটক করেছে।

প্রায় মাসব্যাপী চলা বিক্ষোভে ৫৩ জন নিহত ও ৪০০ জন আহত হয়েছেন। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতাধীন অবসর ভাতা ৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণার পর বিক্ষোভ শুরু করে মানুষ।

গত ১৬ এপ্রিল ওর্তেগা অবসরোত্তর ভাতা ও এর তহবিল পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শ মেনে দেওয়া এই ঘোষণায় পেনশন তহবিলে ব্যক্তির অংশ বাড়ানোর পাশাপাশি ভাতার পরিমাণ কমানো হয়। নিকারাগুয়ার পেনশন তহবিলের একাংশ বিনিয়োগ করা হয় ওর্তেগা সরকারের কর্তাব্যক্তিদের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানে, যা আগামী আগস্টেই দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এই অবস্থায় ছোট পরিসরে পরিবেশ আন্দোলনে ব্যস্ত থাকা শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠে। শুরু হয় বিক্ষোভ। শান্তিপূর্ণভাবেই। কিন্তু সরকারি বাহিনী ও সরকারদলীয় সংগঠনের কর্মীদের হামলা এই বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালে। নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর চালানো হয় সশস্ত্র হামলা। শতাধিক মানুষ এক রাতেই আহত হয়। নিহত হয় অন্তত ৩৪ জন।

বিক্ষোভের শুরুতে এর বিস্তৃতি সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে পারেননি ওর্তেগা। ২১ এপ্রিল তিনি এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও খুবই অল্প কিছু মানুষের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দেন। এই মন্তব্য বিক্ষোভের আগুনে আরও ঘি ঢালে। এর পরদিনই অবশ্য তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে পেনশন-সম্পর্কিত পূর্ববর্তী ঘোষণা প্রত্যাহার করেন। পেনশনের দাবির সঙ্গে যুক্ত হয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিক্ষোভে হওয়া হামলার পূর্ণ তদন্তসহ বহু দাবি।

৪ মে এসব দাবিও মেনে নিয়ে জাতীয় সংলাপের আহ্বান করেন ওর্তেগা।

এই মুহূর্তে নিকারাগুয়ায় চারটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষে ওর্তেগা সরকার। অন্য তিনটি পক্ষে রয়েছে জনতা, ব্যবসায়ী ও গির্জা। এই জনতার মধ্যে আবার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ। এর একটি অংশে রয়েছে নারীরা। অন্য অংশে কৃষক ও শিক্ষার্থীরা। আর এই পুরো বিরোধী শক্তিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে শিক্ষার্থী সমাজ।