কর্ণাটক নিয়ে দিল্লিতে মধ্যরাতের নাটক

কর্ণাটকের নির্বাচন হওয়ার পরও রাজনৈতিক নাটক অব্যাহত। ছবি: রয়টার্স
কর্ণাটকের নির্বাচন হওয়ার পরও রাজনৈতিক নাটক অব্যাহত। ছবি: রয়টার্স

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন বিজেপির বি এস ইয়েদুরাপ্পা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় রাজভবনে ইয়েদুরাপ্পাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল বাজুভাই বালা। কিন্তু রাজনৈতিক নাটক এখনো অব্যাহত। রাজ্যপালের আঙিনা থেকে বল এখন সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে। কাল শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টই ঠিক করবেন, নাটকের যবনিকা পতন কীভাবে ঘটবে কিংবা আদৌ ঘটবে কি না। 

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে নয়টায় রাজ্যপাল শপথ গ্রহণের চিঠি পাঠান ইয়েদুরাপ্পাকে। রাজভবন থেকে সেই চিঠি কিন্তু প্রচার করা হয়নি। প্রচারিত হয় বিজেপি থেকে। এর পরেই কংগ্রেস-জেডি (এস) নেতারা আলোচনায় বসে ঠিক করেন, রাতেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন। মধ্যরাতে রাজধানী দিল্লি যখন প্রবল দাবদাহ থেকে বাঁচতে গৃহবন্দী, কংগ্রেস-জেডি (এস) আইনজীবী নেতারা তখন কড়া নাড়েন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বাড়ি। অভিযোগ শোনার পর তিনি তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ গঠনের নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী বিচারপতি এ কে সিক্রি, এস এ বোবড়ে ও অশোক ভূষণের বিশেষ এজলাস বসে রাত পৌনে দুটোয়। দুটো বেজে এগারো মিনিট থেকে শুরু হয় সরকার, বিজেপি ও বিরোধী পক্ষের সওয়াল জবাব। কংগ্রেস-জেডি (এস) শপথ গ্রহণ স্থগিত রাখার আবেদন জানায়। কিন্তু আজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানান, সকালবেলার শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান যেমন নির্ধারিত আছে, তাতে হেরফের ঘটানো হচ্ছে না। শপথ হোক। কিন্তু তা নির্ভর করবে সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ের ওপর। কাল সুপ্রিম কোর্ট সেই রায় জানাবেন। তার আগে সরকার গড়ার দাবি জানিয়ে রাজ্যপালকে যে চিঠি বিজেপি পাঠিয়েছে, তা আদালতে পেশ করতে হবে। বিচারপতিরা বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সেই চিঠি দেখা অত্যন্ত জরুরি। বিচারপতিরা এই নির্দেশও দিয়েছেন, কংগ্রেস-জেডি (এস) জোট আদালতে যে আবেদন জানিয়েছে, সে সম্পর্কে ইয়েদুরাপ্পা ও কর্ণাটক সরকারের বক্তব্য জানাতে হবে।

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির বি এস ইয়েদুরাপ্পা। ছবি: রয়টার্স
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির বি এস ইয়েদুরাপ্পা। ছবি: রয়টার্স

মাঝরাতের এই নাটকে কংগ্রেস-জেডি (এস) জোটের পক্ষে আদালতে উপস্থিত হন কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল এবং বিজেপির পক্ষে প্রবীণ আইনজীবী মুকুল রোহতগি। শপথ গ্রহণ স্থগিত রাখার আবেদনের বিরুদ্ধে তাঁরা বলেন, শপথ হলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে না। এটা জীবন-মরণের প্রশ্ন নয়। তাঁরা বলেন, রাজ্যপালের পদ সাংবিধানিক। তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্ত আরেকটি সাংবিধানিক সংস্থা (সুপ্রিম কোর্ট) চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে না।

ভোর পর্যন্ত চলা এই নাটকের পর আজ রাজভবনে সংক্ষিপ্ততম অনুষ্ঠানে শপথ নেন ইয়েদুরাপ্পা। এরপরই তিনি বিধানসভা ভবনে গিয়ে তার চৌকাঠে মাথা ঠেকান। সকাল থেকেই কংগ্রেস-জেডি (এস) নেতারা বিধানসভার সামনে ধরনায় বসেন। তাঁরা বলেন, ‘আমরা জনতার দরবারে এসে দাঁড়িয়েছি। কীভাবে বিজেপি সংবিধানের অবমাননা করছে দেশবাসী তা দেখুক।’

শপথ গ্রহণের পরেই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী টুইট করেন, বিজেপি যখন বিজয় উৎসব পালন করবে, তখন সারা দেশ গণতন্ত্র হত্যার জন্য শোক পালন করবে।

নাটকের উত্তেজনা অব্যাহত। দুই শিবিরেই তৎপরতা তুঙ্গে। বিজেপি যেন তেন প্রকারেণ সমর্থন জোটাতে ব্যস্ত। কোটি কোটি টাকার থলি এবং মন্ত্রিত্বের টোপ দিয়ে বিধায়ক কিনতে প্রস্তুত বিজেপি। বিরোধী শিবির ব্যস্ত বিধায়কদের ধরে রাখতে। তারই মাঝে দেশের নজর সুপ্রিম কোর্টের ওপর। কাল কী বলেন তিন সদস্যের বেঞ্চ। বিরোধী শিবিরকে আশা জাগিয়েছে বিচারপতিদের এক মন্তব্য। তাঁরা বলেন, ‘এখানে তিনটি বড় দল রয়েছে। এক নম্বর দল বিজেপি, দুই নম্বর দল কংগ্রেস, তিন নম্বর জেডি (এস)। কংগ্রেস-জেডি (এস) একজোট হয়েছে। তাদের সম্মিলিত সংখ্যা বিজেপির চেয়ে বেশি। তা হলে এই অবস্থায় ইয়েদুরাপ্পা কোন যুক্তিতে সরকার গঠনের দাবি পেশ করলেন? আমাদের কাছে ওই চিঠিগুলো নেই। এটা অনুমান। পাটিগণিতে কিন্তু দাবি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।’