মিয়ানমারে রয়টার্সের সাংবাদিকদের নথি ধরিয়ে ফাঁসানোর কথা অস্বীকার

মিয়ানমারে আটক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন (৩১) ও কিয়াও সো ওও (২৭)।
মিয়ানমারে আটক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন (৩১) ও কিয়াও সো ওও (২৭)।

মিয়ানমারে আটক করা আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও তাঁদের হাতে গোপন নথি ধরিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দেশটির পুলিশের এক কর্মকর্তা।
গত ডিসেম্বরে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট আইনে ওয়া লোন ও কিয়াও সো ওও নামের ওই দুই সাংবাদিককে আটক করা হয়। তাঁরা দুজনই মিয়ানমারের নাগরিক।

দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের খবর সংগ্রহের সময় তাঁরা কিছু নথি সংগ্রহ করেছিলেন। ইয়াঙ্গুন শহরের উপকণ্ঠে পুলিশের নিমন্ত্রণে নৈশভোজে ডেকে তাঁদের আটক করা হয়।

আদালতে পুলিশ কর্মকর্তার ওই সাক্ষ্যের সঙ্গে আগের সাক্ষীর অনেক গরমিল পাওয়া গেছে। এর আগে এ ঘটনায় পুলিশের আরেক কর্মকর্তা সাক্ষী দেন। গত সপ্তাহে দেওয়া ওই সাক্ষ্যে তিনি বলেন, রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে ফাঁসাতে পুলিশ ঘটনাটি (সেট-আপ) সাজিয়েছিল।

গত বুধবার ইয়াঙ্গুনের একটি আদালতে শুনানির সময় বিচারক ই লিনকে পুলিশের ল্যান্স করপোরাল নায়াং লিন বলেছেন, ‘ওয়া লোন ও কিয়াও সো ওওর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় আমি কিছু নিইনি বা তাঁদের কিছু দিইনি। ওয়া লোন আমাকে ফোন করে সাক্ষাৎ করতে চাইলে সেখানে যাই। কল করে তাঁকে আসতে বলিনি। তাঁর কথায় রাতের খাবারে একাই গিয়েছিলাম।’

অবশ্য এর আগে পুলিশের ক্যাপ্টেন মো ইয়ান নায়াং আদালতকে বলেছিলেন, পুলিশের এক প্রধান কর্মকর্তা নায়াং লিন ও আরেক পুলিশ কর্মকর্তাকে গোপন নথি দিয়ে এক অপারেশনের মাধ্যমে ফাঁসাতে বলেন।

গত জানুয়ারি থেকে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট আইনে দুই সাংবাদিককে সাজা দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে শুনানি চলছে। তাঁরা এই আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে ১০ জনকে হত্যার বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। জাতিসংঘ বলছে, এ ঘটনার পর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

রয়টার্সের ওই দুই সাংবাদিক তাঁদের আত্মীয়দের বলেছেন, ইয়াঙ্গুনের একটি রেস্তোরাঁয় নাশতার আমন্ত্রণে অপরিচিত দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁদের হাতে মোড়ানো কিছু কাগজ দেওয়ার পর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা নায়াং লিন বলেন, গত ডিসেম্বরে ওয়া লোন তাঁকে ফোন করে রয়টার্সের প্রতিবেদক হিসেবে পরিচয় দেন এবং রাখাইনে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়ার অনুরোধ করেন। এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাসে রাখাইনে লিনের পুলিশ সিকিউরিটি ব্যাটালিয়ন কর্মরত ছিল। ওই নৈশভোজে ওয়া লোন ১০ খুন সম্পর্কে তথ্য চান।

তবে জেরার সময় আইনজীবী থান জ অং বলেন, ফোন কলের রেকর্ডে দেখা গেছে ১২ ডিসেম্বর ওই পুলিশ কর্মকর্তাই দুপুর ও সন্ধ্যায় তিনবার ওয়া লোনকে ফোন দেন। ওই দিনই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

লিন বলেন, ওয়া লোনই তাঁকে ফোন করে সাক্ষাতের জন্য ডাকেন।

শুনানি বিষয়ে প্রধান আইনজীবী কোউ মিন অং মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে মন্তব্যর জন্য মিয়ানমার সরকারের কোনো মুখপাত্রকেও পাওয়া যায়নি। তবে গত সপ্তাহে শুনানি শেষে মিয়ানমার সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, আদালত স্বাধীন। মামলাটি আইন অনুযায়ী চলবে।