কথা রেখেছেন মমতা!

পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

সত্যিই কথা রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মমতা বলেছিলেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজ্য হয়ে যাবে বিরোধীশূন্য। শুধু মমতাই নন, কথা দিয়েছিলেন তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কেরাও।

মমতারা তাঁদের কথা কার্যত রাখতে পেরেছেন। রাজ্য থেকে প্রায় ধুয়েমুছে দিয়েছেন বাম দল আর কংগ্রেসকে। তবে মুছে দিতে পারেননি বিজেপিকে। শাসকদলের এত সন্ত্রাসের মধ্যেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি এই রাজ্যে দ্বিতীয় হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে মমতার মন্ত্রিসভার অধিকাংশ মন্ত্রীই ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবার এই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১০০ শতাংশ আসনে জিতবে তৃণমূল। রাজ্যে ম্লান হয়ে যাবে বিরোধী দলের অস্তিত্ব।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর মমতাও ঘোষণা দিয়েছিলেন, তৃণমূল জিতবে ১০০ শতাংশ আসনে।

গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, মমতার দল জেলা পরিষদের ৯৮, পঞ্চায়েত সমিতির ৯০ ও গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭৫ শতাংশ আসনে জয়ী হয়েছে।

আর নির্বাচনের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোট আসনের ৩৪ শতাংশ আসন পায় তৃণমূল। যদিও এই ৩৪ শতাংশ আসনের ফলাফল স্থগিত রেখেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আদালত এ বিষয়ে আগামী ৩ জুলাই শুনানির পর আদেশ দেবেন। স্থগিতাদেশ উঠে গেলে মমতার জয়ের ঝুলি যে ভরে উঠবে, তা সহজেই অনুমেয়।

ভোট গণনার সময় কেন্দ্রের বাইরে উত্তেজনা দমাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অ্যাকশন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
ভোট গণনার সময় কেন্দ্রের বাইরে উত্তেজনা দমাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অ্যাকশন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

১০০ শতাংশ আসনে জয় না পেলেও তৃণমূল যে তাদের লক্ষ্য প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে—এ কথা বলা চলে। অবশ্য লক্ষ্য পূরণে ১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারা সন্ত্রাস, ভোট ছিনতাই, ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট—কোনো চেষ্টাই বাদ রাখেনি।

তবে এ কথাও সত্য, রাজ্যজুড়ে মমতার একটা বড় সমর্থন আছে। মমতার উন্নয়নের ছবি ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। কিন্তু প্রশ্ন, সমর্থন থাকা সত্ত্বেও জয়ের জন্য মমতা কেন অপকৌশল নিলেন? তবে কি তিনি বিজেপিকে ভয় পেয়েছেন?

অনেকে অকপটে বলছেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলেও মমতার দলই জিতত। হয়তো তাদের কিছু আসন কমত। তবু মানুষ বলত, মমতা সত্যিই জিতেছেন। মানুষের ভোটে জিতেছেন। তাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষ মনে নিয়েছে। প্রতিদান দিয়েছে ব্যালটে। কিন্তু মমতা সেই পথে না হেঁটে কেন ভিন্ন পথ বেছে নিলেন, এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্যজুড়ে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, মমতার মধ্যে সম্ভবত বিজেপির ভয় ঢুকে গেছে। মমতা জানেন, বাম দল নিশ্চিহ্ন হবে। কংগ্রেসের অস্তিত্ব থাকবে না। কিন্তু বিজেপিকে ঠেকানো তাঁর জন্য কঠিন হবে। এই আতঙ্ক থেকেই তিনি হয়তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও জোরজুলুমে জয়ের পথ বেছে নিয়েছেন।

তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩১ হাজার ৭৮৯টি আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত তৃণমূল পেয়েছে ২১ হাজার ৫৫৪টি আসন। বিজেপি পেয়েছে ৫ হাজার ৬৫৮টি আসন। বাম দল পেয়েছে ১ হাজার ৪৭১টি আসন। আর কংগ্রেস পেয়েছে ৯৪৭টি আসন।

থানা পর্যায়ের পঞ্চায়েত সমিতির ৬ হাজার ১২৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৪ হাজার ৫০০, বিজেপি ৬৫৩, বাম দল ৯৫ ও কংগ্রেস ১০৬টি আসন পেয়েছে।

জেলা পরিষদের ৬২১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৪৪৮, বিজেপি ১১, বামফ্রন্ট পেয়েছে ২ ও কংগ্রেস ৪টি আসন পেয়েছে।

২০১৩ সালে মমতার আমলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল জিতেছিল ২৫ হাজার ১৭৫টি আসনে। এ ছাড়া বাম দল ১৫ হাজার ৬১৪, বিজেপি ৫৮৪ ও কংগ্রেস ৫ হাজার ৪৯৫টি আসনে জিতেছিল।