পঞ্চায়েতে বাম পিছিয়েছে, এগিয়েছে বিজেপি

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট গণনার দিন হাঙ্গামা ও পুলিশের লাঠিপেটা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট গণনার দিন হাঙ্গামা ও পুলিশের লাঠিপেটা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাম আর কংগ্রেস দল ভেবেছিল, তৃণমূল এবার তাদের জিততে দেবে না। নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শাসক দলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ আর বিধায়কেরা সবাই বলেছিলেন, তৃণমূল এবার ১০০ শতাংশ আসনে জিতবে। রাজ্য থেকে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি ধুয়ে-মুছে যাবে। হয়েছেও তা-ই।

পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে জিতেছেন মমতা। গতকাল শুক্রবার তিনি বলেছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর দল ৯০ শতাংশ আসনে জয়ী হয়েছে। এতে অবশ্য চটেছে বিরোধী বাম দল থেকে কংগ্রেস-বিজেপি। তারা বলছে, মমতা এই ১০০ শতাংশ আসনে জয়ী হতে আগেভাগেই নীলনকশা করে রেখেছিল। সেই নীলনকশার বাস্তবায়ন হলো এবার।

বাম দল বিশ্বাসও করতে পারছে না এভাবে তাদের পতন হবে? কংগ্রেসেরও একই কথা। মুর্শিদাবাদ, মালদহ আর উত্তর দিনাজপুরের কংগ্রেস ঘাঁটিকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ওড়ানো হয়েছে তৃণমূলের পতাকা। বাম দুর্গেও লাল পতাকা নামিয়ে উড়ানো হয়েছে সবুজের পতাকা। তাই তো এবার এই রাজ্যপাট থেকে বিদায় নিয়েছে বাম দল আর কংগ্রেস। নতুন রূপে এসেছে পদ্মফুলের গেরুয়া পতাকা।

তাই এবার চলে গেল বাম, আর এল রাম। যদিও রামের জয় যে বিরাট ব্যবধানে ছিল না; তবু এই রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে রাম বা বিজেপি। বাম বা কংগ্রেসের এবার এই হাল হবে, কেউ ভাবতে পারেনি।

পশ্চিমবঙ্গের সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল ২০১৩ সালে। তখন তৃণমূলের শাসন ছিল। মমতার সরকারের অধীনেই সেদিন পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। দিকে দিকে ওড়ে শুধু তৃণমূলের পতাকা আর তৃণমূলের জয়ধ্বনি।

সেদিনের সেই নির্বাচনে এই গ্রাম পঞ্চায়েতে বাম দল জিতেছিল ১৫ হাজার ৬১৪টি আসনে। কংগ্রেস জিতেছিল ৫ হাজার ৪৯৫টি আসনে। আর বিজেপি জিতেছিল মাত্র ৫৮৪টি আসনে। এবার সেই চিত্র উল্টো হয়ে গেছে। বাম দল জিতেছে মাত্র ১ হাজার ৬২৪টি আসনে। কংগ্রেস জিতেছে ৮৬৯টি আসনে। আর বিজেপি জিতেছে ৫ হাজার ৫৯৭টি আসনে। অথচ গত নির্বাচনে বিজেপির ছিল মাত্র ৫৮৪টি আসন।

একইভাবে এই রাজনৈতিক পতনের ছবি বাম দল ও কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সমিতির ফলাফলেও। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত সমিতিতে বাম দল জিতেছিল ২ হাজার ৮২৯টি আসনে, কংগ্রেস জিতেছিল ৯১৮টি আসনে আর বিজেপি জিতেছিল মাত্র ৩৩টি আসনে। এবার সেখানে হলো বাম দল ১২৬, কংগ্রেস ১২৭ আর বিজেপি হলো ৭৫৫।

আর জেলা পরিষদে দেখা গেল বাম দলের আরও নাজুক চেহারা। গত নির্বাচনে জেলা পরিষদে বাম দল জিতেছিল ২১৩টি আসন, কংগ্রেস জিতেছিল ৭৭টি আসন আর বিজেপি গত নির্বাচনে জেলা পরিষদে একটিও আসন পায়নি। এবার বিজেপি পেল ২২টি আসন। বাম দল ১টি আসন আর কংগ্রেস পেল ৩টি আসন। ভাবা যায়?

গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৭ হাজার ৩৭১টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ৭ হাজার ৯৯৬টি আসন এবং জেলা পরিষদের ৭৯২টি আসন। গত ২০১৩ সালে তৃণমূল পেয়েছিল গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৫ হাজার ১৭৫টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ৫ হাজার ৩০৬টি আর জেলা পরিষদের ৫৩১টি আসন। এবারের ফলাফলে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল, এই রাজ্যপাট থেকে বিদায় নিল বাম দল, কংগ্রেস। এল বিজেপি। তাই অনেকেই বলছে, বাম গেল এল রাম।

পশ্চিমবঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৮ হাজার ৬৫০টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ২১৭টি আসন আর জেলা পরিষদের ৮২৫টি আসন। এই আসনের ৩৪ শতাংশ নির্বাচনের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নেয় শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। সেই জেতা আসনের ফলাফলের ওপর এখন স্থগিতাদেশ রয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের। আগামী ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট ওই মামলার রায় দেবে। এবারের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়নি বিরোধীরা।