ভারতের কর্ণাটকের ইয়েদুরাপ্পা কি তিন দিনের মুখ্যমন্ত্রী

ইয়েদুরাপ্পা
ইয়েদুরাপ্পা

কর্ণাটক-নাটকের শেষ অঙ্ক অভিনীত হতে চলেছে আজ শনিবার। সংখ্যাগরিষ্ঠ কারা, ১০৪ বিধায়কের বিজেপি, নাকি ১১৬ সদস্যের কংগ্রেস-জেডিএস জোট, বিকেল চারটায় বেঙ্গালুরু শহরে বিধানসভা ভবনে মীমাংসা হতে চলেছে সেই বিতর্কের। সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ গতকাল শুক্রবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের এই নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁরা স্পষ্টই জানিয়েছেন, কোনো পক্ষ যাতে প্রয়োজনীয় সমর্থন জোটাতে অনৈতিক কাজ করতে না পারে, সে জন্যই এই নির্দেশ।

সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ পাওয়ার পর রাজ্যপাল বাজুভাই বালা বিজেপি বিধায়ক কে জি বোপাইয়াকে প্রোটেম স্পিকার নিযুক্ত করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ আপাতদৃষ্টিতে বিজেপির পক্ষে কিছুটা হতাশাজনক। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পাকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য রাজ্যপাল ১৫ দিন সময় দিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট তা নাকচ করে দেন। গোপন ব্যালটে রায় নেওয়ার জন্য বিজেপির আইনজীবী মুকুল রোহতগির দাবিও তিন বিচারপতির বিশেষ এজলাস খারিজ করে দেন। এ ছাড়া বিচারপতি এ কে সিক্রি, এস এ বোবড়ে ও অশোক ভূষণের বেঞ্চ জানিয়ে দেন, শক্তি পরীক্ষার আগে মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা কোনো রকম নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ইয়েদুরাপ্পা সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী রাজ্যের অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সমাজের একজনকে বিধানসভায় মনোনীত করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট সেই নিযুক্তি খারিজ করে দিয়েছেন। নিযুক্তি বহাল থাকলে বিজেপি একটি বাড়তি ভোট পেত। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইয়েদুরাপ্পা জানিয়েছেন, জয় সম্পর্কে তাঁরা এক শ ভাগ নিশ্চিত।
ন্যায়বিচারের দাবিতে বুধবার মধ্যরাতে কংগ্রেস-জেডিএস জোটের পক্ষে কংগ্রেসের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বাড়িতে হাজির হন। প্রধান বিচারপতি তিন সদস্যের বেঞ্চ গঠন করে দেন মামলাটি শোনার জন্য। রাতভর তার শুনানি চললেও জোটের দাবি অনুযায়ী শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ওপর স্থগিতাদেশ দিতে সুপ্রিম কোর্ট অস্বীকার করেন। যদিও জানিয়ে দেন, শপথ নিলেও তা নির্ভর করবে সর্বোচ্চ আদালতের সম্মতির ওপর। তবে সেই সঙ্গে বিচারপতিরা এ কথাও বলেন, সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে রাজ্যপালকে বিজেপি যে চিঠি দিয়েছিল, তা শুক্রবারের শুনানির আগে এজলাসে পেশ করতে হবে। সেই অনুযায়ী শুক্রবার সকালে মুকুল রোহতগি দুটি চিঠি পেশ করেন। কোনোটিতেই গরিষ্ঠতার কোনো প্রমাণ ছিল না। শুধু বলা ছিল, পরিষদীয় দল ইয়েদুরাপ্পাকে নেতা নির্বাচিত করেছে। তাঁকে সরকার গড়ার সুযোগ দেওয়া হোক। গরিষ্ঠতার প্রমাণ তিনি বিধানসভাতেই দেবেন। উল্টোদিকে জোটের পক্ষ থেকে সরকার গঠনের দাবিতে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তাতে ১১৬ জন বিধায়কের নাম ও সই ছিল। শুক্রবার বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতিরা বলেন, কিসের ভিত্তিতে রাজ্যপাল ঠিক করবেন, কাকে সরকার গড়ার সুযোগ দেবেন? একক গরিষ্ঠ দলের মৌখিক দাবি নাকি জোটের লিখিত সমর্থন? তাঁরা বলেন, কোনো সন্দেহ নেই এটা সংখ্যার খেলা। তাই রাজ্যপালের দেখা দরকার আপাতদৃষ্টিতে কাদের পাল্লা ভারী।
বিজেপির আইনজীবীর দাবি ছিল, বিধানসভায় শপথ গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত দলত্যাগ নিরোধ আইন কার্যকর হয় না। সুপ্রিম কোর্ট সেই যুক্তিও খারিজ করে দেন। বলা হয়, দলীয় টিকিটে নির্বাচন জেতার সঙ্গে সঙ্গেই ওই আইন বলবৎ হয়ে যায়।
কর্ণাটকের রাজ্যপাল ১১৬ জনের জোটকে সুযোগ না দিয়ে ১০৪ জনের নেতাকে সরকার গড়তে দিয়ে ঠিক না ভুল করেছেন, সে বিষয়টির নিষ্পত্তি সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার করেননি। আগামী দিনে তা করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে কংগ্রেস-জেডিএস ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করেছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে জোট বিধায়কদের বেঙ্গালুরু ফিরিয়ে আনার তৎপরতা। বৃহস্পতিবার রাতেই বাস ও গাড়িবোঝাই করে দুই দল তাদের বিধায়কদের হায়দরাবাদে নিয়ে যায়। বিজেপির ‘আগ্রাসী মনোভাবের’ হাত থেকে আগলে রাখতে বিধায়কদের তারা ভাড়া করা বিমানে ভিন রাজ্যে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, সেই বিমানকে ওড়ার অনুমতি কেন্দ্র দেয়নি। বাধ্য হয়ে বাসে চেপে বিধায়কেরা রাজ্য ছাড়েন। এবার শনিবারের মধ্যেই তাঁদের বেঙ্গালুরুতে ফিরে আসতে হবে শক্তি পরীক্ষায় নামার জন্য।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিধায়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আবেদন জানানো হয়েছিল। এও বলা হয়েছিল, গোটা প্রক্রিয়া যেন ‘ভিডিও’ করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার নির্দেশ দিয়েছেন কর্ণাটক পুলিশের মহাপরিচালককে।
ইয়েদুরাপ্পা জিতে গেলে বিজেপি দ্বিতীয়বার কর্ণাটকের অধিকার হাতে পাবে। কিন্তু শক্তি পরীক্ষায় হেরে গেলে তিনি হবেন দ্বিতীয় ক্ষণস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৯৮ সালে বিজেপির বিরোধিতা করে মাত্র এক দিনের জন্য উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন জগদম্বিকা পাল। রাজনীতির বিচিত্র গতিপথে ভেসে সেই জগদম্বিকা পাল আজ বিজেপির সাংসদ।